ছোটো বেলার একটা ঘটনা মনে আছে। সেবার পিসেমশাই (বিখ্যাত সাহিত্যিক নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় ) ছুটিতে সপরিবার আমাদের জলপাইগুড়ির বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়ির কাছেই করলা নদী।  তিস্তা নদীও বেশি দূরে নয়।  বর্ষার সময় তিস্তার জলে দুই পার ভেসে যেত, আবার শীতের সময় নদীতে চর জেগে উঠত। সেই সময়টা, ঋত্তিক ঘটকের অযান্ত্রিক মডেলের গাড়ি চেপে তিস্তা পার হত লোকে । সেদিন শীতের বিকেল বেলা  আমরা ছোটরা সবাই   মিলে তিস্তার চরে বেড়াতে গিয়েছি। চরের ধারে  পাথরের  মধ্যে একটা সিঁদুর (কেউ কেউ রক্তও বলছিল ) মাখানো ত্রিশূল পোঁতা , লাল কাপড় , কিছু  খুচরো পয়সা আর কি কি সব । কপালকুন্ডলার গল্প  জানা থাকার জন্য, কাপালিকদের সম্বন্ধে ভয় - বিদ্বেষ দুটোই ছিলো। প্রশ্ন উঠছে , ওটা যে কাপালিকের সম্পত্তি তা কিভাবে নির্ণয় হলো ! কোনো মরার মাথার খুলি জাতীয় কিছু সেখানে ছিল না । কিন্তু ৪৫ বছর  আগে সেই দিনে সেই প্রশ্ন মনে জাগে নি|শীতের বিকেল মরে সন্ধ্যে হতে সময় লাগেনা।  একটা শীত শীত গা ছম ছমে ভাব।  দাদার নেতৃত্বে , সেই তথাকথিত কাপালিকের ত্রিশুল , পয়সা সবকিছু  তিস্তার জলে ফেলে , ছুটে বাড়ি ফিরে এলাম । সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, পিসেমশাই (নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় ) বাড়ীর উঠোনে  আরাম কেদারায় বসে ছিলেন। আমি হাঁপাতে হাঁপাতে এসে, ওনাকে  আমাদের বীরত্বের কাহিনী বললাম।  উনি স্বাভাবিক প্রশান্ত মুখে সবটা শুনে বললেন ," গরিব মানুষের জিনিসগুলো ফেলে কি লাভ হলো ?" শিলালিপিতে আরেকটা আঁচড় পড়লো ।