সারা গায়ে রুপোলি আভা, নীলচে মৃগাক্ষি, নিম্ননাভি,
কুঞ্চিত কেশ মেঘরাশির মত পাগল হাওয়ায় মাতোয়ারা।
চৈত্রের বুকে নেমে আসা অমোঘ রাত্রি প্রেমিক সেজেছে অতি অপরূপ এক মহীয়সির জন্য।
রাত ন’টা বাজতে পাঁচ এর বাস এ হঠাৎ চোখ পড়ল।
লালচে ঠোঁট ছোট্ট টিপ আর হালকা রঙের শাড়ী,
না জানি কত শুভ্র গোলাপ হিংসায় মৃত্যু বরণ করেছে,
যেকোনো পুরুষের ক্লান্তির আস্তরণ ফুঁড়ে প্রশান্তির চাদর বিছিয়ে দিতে সক্ষম,
তার জ্যোৎস্না।
ধুধু মরু প্রান্তরে কোনো ভ্রমিত পথিককে যেমন আকর্ষণ করে মরীচিকা,
আমার চোখ দুটোকে তেমন টানছিল তার মায়াবী রূপের নির্যাস।
তারপর রোজ তাকে দেখি, এক বাস এ সহযাত্রী।
রোজ নির্দিষ্ট গলির ধারে শেষ করে যাত্রা,
আর বাকি পথ টা আমার তার আবেশেই কেটে যায়।
হয়তো ভালোবাসা নয় ভালোলাগা জন্মেছিল।
হঠাৎ একদিন প্রতীক্ষা শুষে নিচ্ছে ধৈর্য,
রক্তবীজের মত বাড়ছে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা।
কিন্তু আর দেখা মেলেনি তার।
তার কয়েকমাস পর ,
শোভাবাজার এ আবার দেখা, দুপুরের রাস্তাতে,
সাত আটজন বাবুদের ভীড়ে রেড সিগন্যালে।
পাশেই ছিল আমার গাড়ি থমকে আমার চোখ,
মহামাংসের উপর তখন চিল শকুনের নজর!
চলছে দরাদরি রাতের অভিলাষের।
লেপ্টে গেছে ঠোঁটের লাল ঘষটে গেছে কাজল,
তীব্র অস্বস্তিতে ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম মুখ,
ড্রাইভারকে বলেছিলাম যত তাড়াতাড়ি পারো ছেড়ে চলো এ শহর।
তারপর ঝরে গেছে একটা পূর্ণ বসন্তের পাতা,
আবার এসেছে সেই সময় কলবোশেখী যখন উল্টে দেয় সবকিছু।
চৈত্রের শেষ পূর্ণিমা আকাশে করছে রহস্য উদঘাটন।
রাত তখন 8 টা, রবিবার।
একাকীত্বের অভিমান ভেজাতে সিসিডি তে কফির চুমুক।
কোণের এক টেবিলে একাই তখন রাজা।
বাঁধনহারা চোখের আর দোষ কি বলো ছুটছে তখন চতুর্দিক,
হঠাৎ আটকা পড়লো আবার চোখ কোনো পরিচিত মরিচিকায়।
সেই রৌপ্য বর্ণা কন্যা, সেই বহুকাঙ্খিত শরীর।
কিন্তু সেদিন আমার সাথে হয়তো
আকাশের সমস্ত তারাও বিস্মিত হয়েছিল
পাশে বসে থাকা তরুণটিকে দেখে।
সেই সব বাবুদের ভিড়ের একজন চেনা মুখ।
তফাৎ শুধু একটাই,
তাদের মাঝে ছিল আজ রবি ঠাকুরের বন্ধন।
হয়তো সেদিন সেই যুবকের শরীর নয় হৃদয় আহরণের অভিপ্রায় ছিল।
কাঁধে কাঁধ আর লাল জবার লজ্জা ছিল সেই নারীর গালে।
প্রাচীন বন্ধ্যা ভূমিতে সভ্যতা গড়ে ওঠার সুখ আমি দেখেছিলাম সেদিন ওর চোখে,
আজ ওর বুকে মাংসের খোজ নিতে হয়ত আসেনা নেকড়ের জাত
হয়তো সে ই খুজে নিয়েছিল কয়লার নিভৃতে হীরে ,
যে হাত দুটো টেনে দিত তীব্র মুহূর্তের যন্ত্রণা মাংসাশী দের পিঠে
সেই হাতে আমি সঞ্চয়িতা দেখেছি,
সেই হাতে আমি শুধু পুরুষ নয় প্রেমিকের হাত দেখেছি।
গাঢ় অমাবস্যা কাটিয়ে চৈত্রের তখন শেষ পূর্ণিমা,
তৃপ্ত হৃদয় বলেছিল ভালো থেকো চৈত্রী।