।।আমার গ্রাম।।
দেবপ্রসাদ জানা
  ১১.৬.২০২০
এখান থেকে কতটা দূর
আমার গ্রাম গোবিন্দপুর।
ভূলতে পারিনি আজো আমি
স্বপ্নের ঘোরে সেথায় নামি।
আমার গাঁয়ের পথ মেঠো
লোক গুলো সব বুদ্ধি খাটো।
কোন সকালে কোদাল কাঁধে
মুড়ি লঙ্কা গামছা বাঁধে।
পান্তা খেয়ে লাগে কাজে
যখন ঠিক পাঁচটা বাজে।
সাদা সরল মনের মানুষ
বলাই কানাই সুবল ধনুষ।
কাঠ ফাটা উঠলে রোদ
কাজ করে নাইকো বোধ।
কাদামাটি মেখে গায়
মেঠো পথে খালি পায়।
ধান গম সবজি ফলায়
লাল গামছা দিয়ে গলায়।
তাজা সবুজ বাতাস পায়
তাজা মাছের ঝোল খায়।
বড়ই সরল জীবন যাপন
মনের কথা করে না গোপন।
গোবর জলে সকাল বেলা
ধুপ প্রদীপে সন্ধ্যা বেলা।
আকাশবাণীর খবর শোনে
রূপকথার গল্প বোনে।
রাজারানী রাক্ষস খোক্ষস
ঘুমের সাথি তক্তপোষ।
ঘুঁটের ছাইয়ে দাঁত মাজে
নিম দাতন ও মাঝে মাঝে।
এখান থেকে অনেক দূরে
এমনি চলে গোবিন্দ পুরে।
শীতলা মায়ের মন্দির আছে
নাট মন্দির তারই কাছে।
বছর বছর সয়াল বসে
কলকাতার যাত্রা আসে।
সাতটা দল সাতদিনে
ভক্তিভরে গল্পে গানে।
সারাটা গ্রাম এক সাথে
খাওয়া দাওয়া এক পাতে।
ম্যারাক বাঁধা বাঁশে বাঁশে
ছেলেরা সব ঘুরে আসে।
ঝুট ঝামেলার বিচার তরে
পঞ্চায়েতে নালিশ করে।
আগেপরে গরুর গাড়ি
বোঝাই করা মাটির হাঁড়ি।
মাটির হাঁড়ির ধান সেদ্ধ
সহজে তারা হয় না বৃদ্ধ।
পুকুর ঘাটে বাসন মাজে
বধুর পায়ে নুপুর বাজে।
কলসী কাখে জল আনতে
যায় যে তারা শেষ প্রান্তে।
লক্ষীবারের লক্ষী পুজায়
পাতবে ঘট পটের সোজায়।
আলতা সিঁদুরে রাঙ্গাবধু
ঘোমটা দিয়ে থাকে শুধু।
গোবর গুলে ঘর লেপা
ঘরের মাথায় খড় চাপা।
ধানের গোলায় ভর্তি ধান
নবান্নেতে গায় যে গান।
নতুন ধানে নতুন আদর
হাসতে খেলতে পুরো বছর।


হাসি আনন্দে ভরপুর
সে সব এখন বহুদূর
ধরলো সেথা মারন রোগ
মহামারী মহা ভোগ।
চাষবাসের উঠল পাট
ধুধু করে মাঠ ঘাট।
গোলার ধান সব শেষ
ভুগছে যখন পুরো দেশ।
পঙ্গপালের দল এল।
যা ছিল  তাও গেল।
ঘরে ঘরে শুধুই অভাব
বাটি হাতে শেষ নবাব।
গ্রামের মানুষ সরল সাদা
ঋণের বোঝা চাপায় দাদা।
একটা করে টিপ সই
এমন সুজোগ পাবে কই।
জমি দালাল জমি চায়
বদলে কিছু চাল দেয়।
পেটের জ্বালায় জ্বলছে শুধু
বিক্রি হচ্ছে গৃহবধু।
আকাশ ছোঁয়া দাম চালের
কবে শেষ এই আকালের।
পড়ে আছে শীতলা ঠাকুর
পায় না খেতে পথের কুকুর।
ভেঙ্গে গেছে আটচালা
কেউ বসে না বিকালবেলা।
মরছে মানুষ খিদের জ্বালায়
গ্রাম ছেড়ে শহরে পালায়।
কুড়ির বিষে জ্বলছে সব
আমফানের কলবর।
শুধু কি আর ভাইরাসে
মরছে মানুষ সন্ত্রাসে।
দানের টাকায় পকেট ভরে
ফেসবুকে লাইভ করে।
তিনতলার ছাদে বসে
কত এলো অঙ্ক কষে।
দান হলো আর কত দূর
এটাই গ্রাম গোবিন্দপুর।