ইতি তোমার মা


প্রিয়
সাহেব।
গত দুমাস যাবৎ
তোমার কোনো খোঁজ নেই।
আমি কেমন আছি?
খাচ্ছি কিনা,
ওষুধ গুলো আর আছে কিনা,
পায়ের ব্যথাটা কমলো কিনা,
চোখের চশমাটা ভেঙ্গেছে কিনা,
কি জানি  তুমি ভালো আছো তো?
জানি না -
সেই যে এখানে রেখে গেলে,
তোমার নতুন আনা গাড়ির
পেছনের সিটে বসিয়ে।
বড় ভালো লাগছিল জানো?
মনে হচ্ছিলো জগতে আমিই একমাত্র মা,
যে ছেলের কাছে
থাকি।
শান্তিতে-
জানো শান্তি এখানে
রোজ বাসন মাজে,
ঘর ঝাঁট দেয়।
অন্ধকার হলে মনে হয়
ডানা মেলে উড়ে যাই।
তোমার কাছে।
এখানে
দুদিকে অনেক খানি খাট
খালি থাকে।
খাটটা বড়।
মম মৌমি শুতে পারে
অনায়াসে।
কিন্তু ওরাতো-
থাক সে কথা -
সবুজ রঙের  একটা
চাদর দিয়েছে এরা।
ভালোই-
কিন্তু তোমার দেওয়া সেই
চাদরটা।
ছিঁড়ে গেছে বোধ হয়-
ওটা গায়ে দিয়ে যে
আনন্দ,
তা নেই।
একটা চিঠি এসে ছিল সেদিন
ভেবে ছিলাম তোমার।
না তা নয়?
এল আই সি।
তোমার বাবা করেছিলেন
যে এখানে আনলে,
তাকে সুধোলুম।
ঠিকানা টা-
পেলো কই?
কি জানি?
তুমি হয়তো।
কিন্তু  বলিনি
জানো?
আমি অসুস্থ হলে
তুমি জেগে থেকে
আমার সেবা করতে
আমার পায়ে মালিশ করতে।
এখানে সবাই কে
বলেছি।
আবার মুখের উপর বলতে
"যাও ডাকো মেয়ে জামাই ভাইকে "
বৌমা আমাকে
আদুরি বলতো।
ভাত মেখে খাইয়ে ও -
দিয়েছে কখনো।
এখানে তুমি নেই
বৌমা ও
হ্যাঁ ভালো আছি
বসে আছি ঘরে
সিরিয়াল -
আর দেখি না।
চিৎকার করে
কথাও বলি না।
তুমি তোমার বাবার ছবিটা
নিতে  বলেছ। নিই নি-
নেবো না।  
একটা বাড়ি
একটা -
বড় স্বাদ ছিল
জানো তো -
নিজের ঘর
নিজের খাট
যেখানে সুধু আমার হুকুম চলবে।
কেউ বলবে না
ওঠো।
"এটা তোমার বাবার খাট?"
না না নালিশ করছি না।
এখানে
জানা অজানা  
কত সব পরিবার  -
সবাই ছেলের বদনাম করে।
আমি করি না
তুমি বাড়ি করেছ,
সুন্দর-
আচ্ছা তোমার মনে পড়ে?
প্রথম যেদিন হাসপাতালে
বলেছিলে
সেরে ওঠো
কে মুছবে ওপর নিচ
ভালো লেগেছিল -
সেদিন এখানে
নামিয়ে,
বললে -
যাও নামো,  
আমিও -
চলে যাচ্ছ যখন
তোমার পিছে দৌড়ে যাই  
পারি নি। তুমি তাকাও নি
একবার ও।
এখানে -
সকলের সঙ্গে গিয়ে বসি,
পুরোনো পাড়ার লোক দেখে।
আজ একশে ফাল্গুন
তোমার জন্মদিন।
আজকের দিনে-
তুমি এলে।
অনেক কষ্টের পরেও
মনটা আনন্দে,
রান্না করেছ বোধ হয়।
জানো?
শুকনো লঙ্কা,  
খাই না আর
শুধু শুকনো ভাত,
ঝাল তরকারি  
তাও না-
আমি ভালো আছি
ইতি তোমার মা।
  
======