উনবিংশ শতাব্দির শেষভাগে মহিলা কবি হিসেবে যাঁরা প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন  মৃণালিনী সেন ছিলেন তাঁদের অন্যতমা।  ১৮৭৯ সালে ভাগলপুরে তাঁর জন্ম । পিতা ব্যরিস্টার ললিত মোহন ঘোষ ( ল্যাডলি মোহন ঘোষ ) পরে যিনি ভারতের  জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হন। মাত্র তের বছর বয়েসে তাঁর বিবাহ হয় পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহের সঙ্গে এবং তিনি রানী মৃণালিনী নামে পরিচিত হন। তিনি অতীব সুন্দরী ছিলেন এবং রানী হবার সব গুণই তাঁর মধ্যে বিদ্যমান ছিল । কিন্তু  মাত্র দুবছর পর রাজার মৃত্যু হলে তিনি বিধবা হন। বিধবা রানীর কঠোর জীবন তিনি কখনো মেনে নিতে পারেননি। ছাব্বিশ বছর বয়সে তিনি  আবার স্বেচ্ছায়  পিতৃগৃহে ফিরে আসেন।পরে  ব্রাহ্ম্ ধর্মের প্রবক্তা কেশবচন্দ্র সেনের দ্বিতীয় পুত্র নির্মলচন্দ্র সেনের সঙ্গে ১৯০৫ সালে তাঁর পুনরায় বিবাহ হয়। তখনকার সমাজের রীতিনীতি অনুসারে এসবই কিছুমাত্র সহজ ছিলোনা। এজন্য তাঁকে অনেক সামাজিক লাঞ্ছনাও সহ্য করতে হয়েছিলো।একটি কবিতায় তিনি তার উল্লেখও করেছেন।


“গ্লানি নিন্দা কুৎসা কত করিল আমার
   দেশের লোকেরা,আর যারা আপনার।“


বিধবা অবস্থায় তিনি নিজেকে  স্বশিক্ষিত করে তোলেন।স্নেহশীল পিতার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমন এবং পরপর চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন , যথাক্রমে প্রতিধ্বনি(১৮৯৪), নির্ঝরিণী(১৮৯৫),কল্লোলিনী(১৮৯৬) এবং মনোবীণা(১৮৯৯)।


১৯১২ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি  ভারতের বাইরে প্রধানত ইংল্যান্ডে থাকা কালীন সরোজিনী নাইডুর সাথে সুইর্জারল্যাণ্ড ও প্যারিসে নারীদের ভোটাধিকার প্রাপ্তির আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। ইংল্যাণ্ডেও দেশ সম্পর্কে নানান সভাসমিতিতে আমন্ত্রিত হয়ে ভাষণ দিয়েছেন।তাঁর সেইসব ভাষণের একটি সংকলন পরে “Knocking at the door”নামে প্রকাশ পায়।মনেহয় তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ উত্তরিকা।যেটি প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। তখন তাঁর বয়স ৮১ বছর। কিন্তু এই কাব্যগ্রন্থটিতে তাঁর অন্য চারটি কাব্যগ্রন্থের বেশকিছু নির্বাচিত কবিতাও স্থান পায়।তাই তিনি এই সংকলনটির নাম দেন “প্রনিকম ও উত্তরিকা।প্রনিকম আসলে তাঁর প্রথম চারটি কাব্যগ্রন্থের আদ্যাক্ষর।এই গ্রন্থের ভুমিকা লেখেন রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতষ্পুত্র শ্রীসৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। শ্রীসৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আলোচনায় কাব্যগ্রন্থগুলির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।প্রশংসা করেছেন তখনকার প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিরা।শ্রীগুরুদাস বন্দোপাধ্যায়, শ্রীরমেশচন্দ্র দত্ত এবং শ্রীরবীন্দ্রনাথ স্বয়ং।রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিবারের যোগাযোগ ছিলো ।একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে তিনি তাঁকে রানী মৃণালিনী বলে সম্বোধন করেছেন। ( ক্রমশ)