বাস্তবতার পর্দা সরালে সবার প্রথম যেদিকে চোখ পড়বে তাই হলো সত্য কিংবা সত্যের বিকৃত আচরণ। আর এই সত্য কিংবা সত্যের বিকৃত আচরণের ঘোমটা সরালে যেই নিষ্পাপ কিন্তু চৌকস যার মুখটি দেখতে পাবে তাই হলো অভিনয়। সত্যের চেয়ে বড় সত্য হলো মিথ্যা, আর ইহা যদি কোনো বিকৃত নারী বা পুরুষের স্পর্শ পায় তখনই অভিনয়ের শব্দ চয়নের এর সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। চলেন সত্যের বিকৃতির সঙ্গে একটু পরিচিত হই, আচরণগুলো তোমার কাছে এমনি ধরা দিবে।


স্বভাবতই প্রায় সকল মানুষই চায় যেন তার সবকিছু স্বপ্নের মত গুছানো থাকুক। যদি আমি ঘরের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে ঘরের ওই কক্ষের ঠিক ডান পাশটায় ভালো আলো পড়ে তাই সেখানে একটি তৈলচিত্র টানানোই দরকার, ঘড়িটা চোখে পড়ার মতো জায়গায় রাখতে হবে, বিছানার এই পাশে ওই আসবাবপত্র রাখতে হবে, টেবিলটার পাশে একটা ফুলদানি হলে ভালো দেখায়, লাখ খানেক টাকার একটা এসি হলে আরাম হবে, বালিশের তুলাগুলো ভালো মনের হতেই হবে, আরো কত কি! একটা ঘরের একটা কক্ষের চিন্তা করলে কত কত জিনিস গুছানোর ব্যাপার চলে আসে কারণ এর সাথে আরাম জড়িয়ে আছে, আরামের সাথে আনন্দ জড়িয়ে আছে, আনন্দের সাথে সুখ জড়িয়ে আছে।


জীবনের বেলাও মানুষ স্বভাবতই এভাবে গুছিয়ে অভ্যস্ত। যেভাবেই হোক কিভাবে আরো ভালো থেকে ভালো ভাবে গুছিয়ে নেওয়াই একসময় মানুষের লক্ষ্য হয়। এভাবে জীবন চালনায় যখন কিছু হারায় তখন দুঃখ আসে, লক্ষ্য স্থির করে ওটা পেয়েই ছাড়বে কিংবা তার চেয়েও আরও ভালো মানের কিছু তাকে জীবনে অর্জন করতেই হবে। অর্জন করতে পারলে বুকে বল আসে, তা না হলে বুকে বল হারায়। এই যে একটা প্রতিযোগিতা এর শেষ কবে হবে? মনে রেখো শেষ না হলেই তোমার মুক্তি নেই। কারণ জীবনের সব ভালো জিনিসের উপর চোখ রেখে ভাবলে, জীবনে যে খারাপ কিছু হতে পারে তার মানসিকতা আর থাকে না এভাবে তৈরি হলো মনের মতো না হলে না মেনে নেওয়ার জন্ম! খারাপ ভালো যতই হবে ততই অভিজ্ঞতা আসে, তুমি চালাক হলে মোহ-মায়া কমিয়ে শুধু নিজেকে কতটুকু উপরে নিয়ে বসাতে পারলে সব খারাপ-ভালো ভুলে  যাবে সেই চেষ্টাই করবে, জন্ম নিলো অহংকারের ও স্বার্থপরতার! আচ্ছা, আচ্ছা তোমার সাথেই একই জিনিস হয়েছে কিন্তু তুমি স্বার্থপর না! আচ্ছা, আমি মেনে নিলাম। একটা জিনিস লক্ষ্য করলে, নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার স্বভাব তবুও যায়নি! শব্দ চয়নের ভুল ধরে তোমার নিজের ছবির অন্য নাম না দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা, নিজের কাছে নিজের চরিত্র সম্পর্কে একটা বুঝে দেওয়ার চেষ্টা? যাক একটু হলেও উপলব্ধির জায়গায় দাঁড় করানো গেল। জীবন নেশায়ও যে মানুষ মাতাল হয় জানো? মাতাল হয়ে কি করে, তারও যৌক্তিকতা কি আছে?


চলো বাদ দেই,  একদল মানুষের কথা শুনাই যাদের জীবনে খারাপ-ভালো সবই ঘটেছে কয়েকবার করে, না আছে তাদের গুছিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা, না আছে বুকে বল অর্জন বা হারানোর ভয়, না আছে উচ্চ রক্তচাপে দাঁত কামড়ে খানিকটা অভিনয় করার মনোবাসনা , না আছে আক্ষেপ, না আছে অতিরঞ্জিত উল্লাসের ছবি আঁকানোর আগ্রহ, না আছে মানসিক নিরলসতার প্রতি অভিযোগ, না আছে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার ইচ্ছা, আছে ভুলে যাওয়ার মতো অসীম অভিনয়ের ক্ষমতা, আছে সব মেনে নিয়ে আক্ষেপের সহিত নয়, দুর্বলতার সহিত একজনের কাছে সব স্বীকার যাওয়ার অপরিসীম দুঃসাহস, আছে নিজেকে সারাদিন কাজে ব্যস্ততায় রেখে মস্তিষ্ককে অনুতপ্তের আগুনে জ্বলতে না দেওয়ার দক্ষ ক্ষমতা, আছে সবকিছু সময়ের দিক দিয়ে ছোট করার মতো নিপুন কারুকাজের সাথে সখ্যতা, আছে স্থির দুটো চোখ, যাতে চোখ রাখলে কিছু বুঝা শক্ত, আছে স্বনিয়ন্ত্রিত শান্ত, অটুট কিন্তু কঠোর মানসিক স্থিতিময় অবস্থা।
এরা পারে সব? পারবে না কেন? না আছে হারানোর মতো কিছু, না আছে অর্জনের মত কিছু, না আছে প্রমাণ করার মত কিছু, কারণ যাই হবে সবই পুরনো, আগেই হয়ে আসেছে, বড়জোর কি বা হবে? তার আশেপাশের সব হারাবে, তাই না? কিন্তু আশেপাশে যা আছে তা তো শুধু কাজের মাধ্যমেই অর্জন করেছে আর কাজ তো করেছে নিজেকে অস্বাভাবিক সুস্থ মহিমায় যেন কিছুই মাথায় না আসে তাই! এরা কারা ? যারা খাবারের উপর নয়, কাজের উপর বাঁচে!