সাত থেকে সাত!
স্বপ্নালু মনের ভিতর বাহিরে সত্যভানে আজও উজ্জ্বল সাহিত্য শাসন। গোধূলিহীন উষার কিরণে আলোকিত করে চলেছে সে এক এবং অদ্বিতীয় নক্ষত্র।
রইল সশ্রদ্ধ নমন~
১৮৬১ ~ ১৯৪১, গুরুদেব, কবিগুরু, বিশ্বকবি প্রভৃতি অভিধায় ভূষিত হয়ে দাপিয়ে বেড়ানো সোনার তরীর যাত্রীর আজ সার্ধশত বর্ষ পেরিয়েও তাঁর পায়ের পাতা সবখানে পাতা। নবীন্দ্রনাথ থেকে রবীন্দ্রনাথ, সাহিত্যের
প্রেমে পড়ে ব্যারিস্টারী পাঠে দাঁড়ি, তাঁর সেই ভবতারিণীর
নাম বদলে মৃনালিনী দেবী রাখার বহর - তাঁর প্রথম কবিতা "পদ্মফুল" হারিয়ে সবাই ভাবতে থাকে তাঁর প্রথম কবিতা "আম সত্ত্ব দুধে ফেলি", স্মৃতি মাখা সবই হৃদয়গ্রাহী ।
তাঁর শান্তিনিকেতন~পাঞ্জাব ~শিলাইদহ~তারপর দেশ ছেড়ে বিদেশ, ছড়িয়ে পড়ে তাঁর খ্যাতির স্ফুলিঙ্গ! প্রথম এশিয়া মহাদেশে নোবেল জয়ী ব্যক্তিত্ব, তাঁর পল্লী উন্নয়নের সেই "পল্লী সংগঠন কেন্দ্র" আর তাঁর মৃত্যুর সাতদিন আগের সৃষ্টিশীলতায় আজ সারা বিশ্বের মাথা তাঁর চরণতলে ঠাঁই পায়। এই স্মৃতি গাঁথা রবে যুগযুগান্তে যেখানে আমি তুমি থাকি বা না থাকি।
তাই আমরা গর্বিত তাঁর সাহিত্যের ঔজ্জ্বল্যের পাশে অন্তত জন্মাতে পেরে।


বাংলা ভাষা তথা বিশ্বের একজন শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা ৫২টি, ১৩টি উপন্যাস, ৩৮টি নাটক, ৩৬টি প্রবন্ধ, ৯৫টি ছোট গল্প, ১৯১৫টি গান যা তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি রূপে প্রতিষ্ঠিত। আমার সোনার বাংলা ও জন গন মন অধিনায়ক জয় হে গান দুটি বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত।


"আমি তোমাদেরই লোক" একথা বলেছিলেন তিনি। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তা যুগের তালে ও টানে কোনদিনই হারাবে না তা একাধিক কবিতা ও গানে বারবার উল্লেখ পাওয়া যায়।
তাঁর সৃজনশীল ক্ষমতার যেকোন একটি বিষয় নিয়ে ক্ষণিক মনোনিবেশ করলেই তাঁর প্রতি শরৎচন্দ্রের স্বীকারোক্তিটি কতটা ধ্রুব সত্যি তা জ্বল জ্বল করে ফুটে ওঠে ~ "তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই"।


তাঁর গানে প্রকাশ পায় "নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রুব তারা" সত্যি রবীন্দ্রনাথ নিবিড় ঘন আঁধারের তারা যা অনন্তকাল জ্বলতেই থাকবে।
সকালের ঘুম ভাঙা থেকে রাতের বিছানা রবীন্দ্রনাথ প্রতিটি মানুষের সাহিত্য সঙ্গী। এতো সাফল্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে তাঁকে। তবে একেবারে ক্লান্ত হয়নি তা কিন্তু নয়, অনুরোধ আর তাগিদ এই দুইয়ের চাপে রবীন্দ্রনাথ তখন ক্লান্ত যা ১৯৩৯ সালের রাণী মহালানবিশকে চিঠিতে  ~ লেখার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও না লিখতে পারার যন্ত্রণার স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়।
কয়েক বছর আগে থেকেই যন্ত্রমানব রবীন্দ্রনাথ পরিক্ষা নিরীক্ষা আর বিপননের হাত বাংলা সিনেমায় চারুলতা, নোবেল চোর, এলার চার অধ্যায়ের মতো কিছু বিকৃত রবীন্দ্র মনোস্ক চিন্তা ভাবনা বা ব্যান্ডের বিকৃত রবীন্দ্র সংগীত রাবীন্দ্রিকতার উৎকর্ষতা প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয় বার বার। কখনো কখনো টলিউডের সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের চিত্র পরিচালকদের দেখা যায় অত্যাধুনিক রাবীন্দ্রিক চিত্র তৈরিতে আঁটঘাট বেঁধে নেমে পড়েন।
তাই এখান থেকে পরিস্কার বলাই যায় বিশ্বকবিকে ঘিরে চাহিদার যে কোনও কমতি নেই বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে তার অকাট্য প্রমান এই রাবীন্দ্রিক চিন্তনের মাতামাতি।


তাই তাঁর মৃত্যুর 78 বছর পরও আজকের সময় থেকে কতটা এগিয়ে থাকলে এখনও এরূপ প্রাসঙ্গিক মহামানবের কৃতিত্বের অধিকারী হওয়া সম্ভব?


আসুন সম্মানিত সকল কবি বন্ধু সাহিত্য রাজ বিশ্ব কবিকে করি সশ্রদ্ধ নমন, করি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
সকল সম্মানিত কবি বন্ধুদের প্রতি রইল গভীর ভালোবাসা।।


মুকুল সরকার
07.08.2020
DHRITI RAJ


         অস্তহীন রবি
    (রবীন্দ্রনাথের প্রতি)


তোর-- উদয় ছিল অস্ত নেই
রাতের গহিন অন্ধকার শেষে
তোর আলোতেই মায়ের পথ চলা।
সেই সকালের স্নিগ্ধ গগন তোর
দুপুরের শাণিত গগন তোরই হাতে গড়া
পরন্ত গোধূলির রক্তিম বর্ণছটা
তোরই আলোর মোহনীয় বিচ্ছুরণ।
আর---রাতের বিমোহিত চন্দ্রালোক 
তোরই কিরণে আলোকিত উদ্ভাসিত।


তোর--- হাইড্রোজেন সংযোজন
প্রসৃত অনন্ত কালের ধারা।
তাই অবিকার অবাধ্য বিশ্বময়
তোরই আলোর ঔজ্জ্বল্য পায়।
শাশ্বত বিস্ফোরিত রবি তুই ---
তোর উদয় ছিল অস্ত নেই
তুই অস্তহীন রবি।।


3rd May 2012
DHRITI RAJ