উচ্চারণটা ভুলই ছিল!
বুঝতে পেরেছেন?
কোনটার কথা বলছি!
ঐ যে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিন বলেছিল সেদিন, "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"।
ব্যাস! ঐটুকুই যথেষ্ট ছিল সেদিন।


তারপর জনতার -
বাঁধভাঙ্গা জোয়ার, টগবগে রক্তের উষ্ণতায় প্রতিবাদী বজ্রমুষ্টি, উদ্দীপ্ত শ্লোগান, প্রকম্পিত রাজপথ, বুলেটবিদ্ধ লাশ আর রক্তাক্ত ইতিহাস।
বদলে যাওয়া পৃথিবীর নতুন মানচিত্রের সেটাই ছিলো পূর্বাভাস।  


উচ্চারণটা ভুলই ছিল!
শুধু বুঝতে পারেনি ওরা!
ওরা ঠাহর করতে পারেনি বাংলা মায়ের দামাল সন্তানদের চোখের চাহনি!
ওরা পড়তে পারেনি পরাধীন বাংলার মুক্তিকামী মানুষের মুখের ভাষা!
তাইতো মুখ ফসকে বলে ফেলল- বাংলা নয়, উর্দুই হবে রাষ্ট্রভাষা!
ছাইচাপা আগুন তখনই দাউদাউ করে জ্বলে উঠে,
পাথরচাপা কান্না ডুকরে উঠে খরস্রোতা নদীর মতো,
উত্তাল জনসমুদ্র মুহূর্তেই রূপ নেয় ফেনিল সাগরে,
সুপ্ত আগ্নেয়গিরির ভয়ানক অগ্নুৎপাতের তপ্তলাভা যেন ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়।
দিকে দিকে শ্লোগানমুখর হয়ে উঠে-
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই,
মায়ের ভাষায় বলতে চাই।  


মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় বীরদর্পে অবতীর্ণ ক্ষেপাঘোড়া তখনই ঝলসে উঠে।
১৪৪ ধারাও ঠেকাতে পারেনি সে রক্ত জোয়ার।
বুলেট আর বেয়নটের সামনে বুক পেতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকে।
বিনিময়ে দাবি শুধু একটাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই।  


ভাষাখেকোরা সেদিনই লেজ গুটিয়ে নিয়েছে।
মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিতে পারেনি ওরা।
বরং সেই ভাষা আদায়ের দীপ্ত শপথ বাঙালির আত্মবিশ্বাসের পারদকে বহুমাত্রিক উচ্চতায় আসীন করেছে।
বাংলা তাইতো শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা নয়,
ইউনেস্কোর সিদ্ধান্তে বাংলা ভাষার আন্দোলনের স্মারক তারিখটা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস!  


উচ্চারণটা ভুলই ছিল!
মুখের ভাষা কেড়ে নেয়ার স্বপ্ন ছিল!
বাংলাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা ছিল!
মায়ের ভাষায় কথা বলা নিষিদ্ধের খায়েশ ছিল!
আরও কত ইচ্ছে ছিল!
হঠাৎ করে কী যে হলো!
ভাষার যুদ্ধে হারতে হলো-
লেজ গুটিয়ে পালাতে হলো।  


সেই থেকে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা শুরু হল।
নতুন পৃথিবীর পুনর্গঠিত মানচিত্রের আভা ফুটল।  


কারণ, উচ্চারণটা নিশ্চিত ভুলই ছিল।


°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ || সন্ধ্যা ৭.১৫ টা।