বিরহ ব্যথার ছলে, বিরহিণী কেঁদে বলে,
আমার প্রিয় চিরসাথী, থাকে প্রবাসে ।
প্রীতি ডোর ছিন্ন ক’রে, ছুটে চলে দেশান্তরে,
বেদনার বালুচরে, জীবিকার আশে ।
সাধি কুল মান যত, সযতনে রীতিমত ,
লোলুপ নজর পড়ে তন্বী তনু পরে ।
করেছি পরাণ পণ, বেঁচে আছি যতক্ষণ ,
রক্ষিব যৌবন ধন, অভাগার তরে ।
ফুলের কানন মাঝে, দল মেলে ফুল সাজে,
মধুপের গুঞ্জনে মুখর হয় বন ।
তেমনি রসিক জনা, শুধু করে আনাগোনা,
কামনার বশে করে খল নিবেদন ।
বিরহের নিপীড়নে, কাম ক্ষুধা জাগে মনে,
সাথী বিনা কেঁদে ফিরে কামনা সকল ।
জীবের আছে যৌনতা, মিলনের আকুলতা,
রতি ক্রীয়ার পরিণতি জীবের ফসল ।
জীব মগ্ন রতির রণে, কাম কেলির অঙ্গনে,
ক্রীড়া শেষে হৃদয় দেশে প্রশান্তি জাগে ।
বিধাতার এই রীতি, প্রাণীতে দিয়েছে প্রীতি,
প্রাণী তাই ঘোরতরে মজে অনুরাগে ।
যেথা সম্ভোগ অহরহ, তা যদি হয় বিরহ ,
বিড়ম্বনা গ্রাস করে দাম্পত্য জীবন ।
কামনার খর স্রোত, যদি করে অবরোধ,
বিপথে পতিত হয় জীবন যৌবন ।
প্রত্যাশার এ জীবনে, বিষাদ আসে ক্ষণে ক্ষণে,
অপূর্ণতার দায়ী শুধু সমাজ ব্যবস্থা ।
সব কথা যায় না বলা, নারী চিরদিন অবলা,
আমাদের লোক-সমাজের এই অবস্থা ।
চাহিদা হয়না পুরণ, নাই কোন বিনোদন ,
চাতক সম জল তৃষ্ণায় মনোপ্রাণ মরে ।
কঠিনতার ঘোর গ্রাসে, তনু মন কাঁপে ত্রাসে,
নিরুপায় প্রবাসী মরে পরিজনের তরে।
আমি এক বিরহিণী, কুলবধু অভাগিনী,
সদা জ্বলে তনু মন, বিরহের অনলে ।
সব দেখি সব জানি, সমাজ ব্যবস্থা মানি,
প্রবাস বিনা গতি নাই, মানি সকলে ।
স্বদেশে নাই উপায়, সে হেতু প্রবাসে যায় ,
এসো তবে ধৈর্য্য ধরি যত নারীগণ ।
তাই সবে রীতি মানি, মিলে মিশে ঘানি টানি,
ঘর হোক স্বর্গসম, এই হোক পণ ।
ফিরে চলি স্বীয় ঘরে, প্রেমময় সুবাসরে,
গ’ড়ে তুলি মধুনীড় জগতের মাঝে ।
ভুলে গিয়ে ভুল ভ্রান্তি , হৃদি’ মাঝে আনি শান্তি,
ফিরে চলি মন বেঁধে, সংসারের কাজে ।।