আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় বোমের ভয়ঙ্কর বিস্ফোটৈর শব্দে;
প্রকাণ্ড শব্দে আমার কান ফেটে রক্ত ঝরে;
স্বাধীন ভারতবর্ষ পিছিয়ে যায একশো বছর;
আমরা একদিন দেখেছি স্বপ্ন; যে স্বপ্নের ভিতর
স্বাধীন মানুষেরা এগিয়ে চলে শান্তির পথে,
স্বাধীন পৃথিবীর খোঁজে ;
যেখানে লেগে আছে শান্তির ভালোবাসা;
পথে, ঘাটে, প্রান্তরে, মানুষের ভিড়ে, সে-সব ভালোবাসা আজ নেই;
উধাও হয়ে গেছে সন্ত্রাসের চক্রান্তে।
আজকের এই মর্মান্তিক বিয়াল্লিশ জন সৈনিকের মৃত্যু তুলে নিয়ে
এলো ; ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন অথর্ব পৃথিবী থেকে
স্বাধীনতার লজ্জা, গ্লানি , হিংসা , দ্বেষ ;
ধর্মান্ধতার নরবলির নৃশংস পরিবেশ।
এই বীর সৈনিকদের কি অধিকার ছিল না স্বাধীন ভারতবর্ষে
স্বাধীন চিন্তা, ভাবনার সাথে বেঁচে থাকার ?
তাঁরা-তো ভাবতে পারতো পরাধীনতার গ্লানিতে জীবনভর কাটিয়ে দিতে,
তাহলে তাঁদের কি-ইবা হতো ?
হয়তো-বা স্বাধীনতার পূর্বে যে-সব প্রাণ
তাঁদের দেশাত্মবোধক ভাবনার জন্য রস আইল্যান্ড এ পাড়ি দিয়েছিল,
পুরনো নক্ষত্রদের সাথে গভীর রাতে বিচরণ করার থেকে
নিজেদের বিরত রেখেছিল,  তাঁদের স্বপ্নের পৃথিবী পাবার আশায়,
রস আইল্যান্ড থেকে পোর্ট ব্লেয়ারের সমুদ্রের উপরে
নতুন তারাদের সাথে জীবন কাটিয়ে ছিল আমৃত্যু;
পোর্টব্লেয়ারের নীল জলে ভাসিয়ে ছিল নিজেদের শরীর
সুন্দর একটা পৃথিবীর স্বপ্নের সাথে;
তাঁরা কি এই উপহার পাবে বলে ভেবে ছিল সেদিন?
এই মৃত‌ সৈনিকদের  জীবন-কুন্ডলী কি এইভাবেই লেখা‌ হয়েছিল?
তাঁরা একত্র জীবন দানে ব্যস্ত থাকবে,
তাঁদের মৃতদেহ তাঁদের সন্তান কিংবা প্রিয়জনদের কাঁধে ভর করে
শেষ বিদায় নেবে না।
মৃতদেহ কোথায়-ইবা যে খুঁজে পাওয়া যাবে!  কোথাও নেই!
শরীরের রক্ত মাংস বিস্ফোটের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
তাহলে তাঁদের জন্য কি অপেক্ষা করছে তাঁদের কর্মকাণ্ড-ই তাঁদের মৃত্যুর জন্য দায়ী!
অথবা সেসব ভুলে গিয়ে তাঁদের প্রাণের বিনিময়ে, আমাদের
প্রাণ রক্ষার দাবিতে তাঁদেরকে শহিদ উপাধি দেওয়া হলো ,
আমাদের ধর্মান্ধতা আর ব্যার্থতার শিকার হতে বাধ্য হলো তাঁরা ,
শহীদের মোড়কে ঢেকে রাখা হলো এরকম আরেকটা পুনরাবৃত্তির জন্য;
এই প্রিয় সৈনিকেরা কি কখনো ভেবে ছিল তাঁদের স্বপ্ন পূরণের ব্যর্থতার কথা?
চিরকালের মতো নিঃশেষ হয়ে যাবে এতগুলো তাজা প্রাণ সংঘবদ্ধভাবে;
তাহলে তাঁরা এইকথা সেইকথা মনে রেখে তাঁদের প্রিয়জনের থেকে
চিরকালের বিচ্ছেদের কথা ভেবে,
তাদেরকে নিয়ে শেষবারের মতো সময় কাটাতো অনেকক্ষণ;
তবুও তাঁরা সে কথা না-ভেবে সময় ও কালের কথা পিছনে ফেলে,
জীবনের অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছিল দেশ ও রাষ্ট্রের কথা ভেবে;
তাঁরা একদিন জীবনের আস্বাদের কথা ভেবে,
জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দিতে গিয়ে,
জীবনের অবসরের সঙ্গী হয়েছিল,
তাঁদের প্রিয়জনদের শেষবারের মতো চুম্বন করতে ভুলে গিয়েছিল।
                                                            
                **********