কিভাবে শান্ত নিস্তব্ধ শুয়ে আছে দ্যাখো,
চিরকালের জন্য সকলকে শেষবারের মতো
বিদায় জানিয়ে নিথর সটান শুয়ে আছে;
সে কি আর জানতে পারবে তার এই শেষ
বিদায়ের সংঘাতে বেদনায় অনেক হৃদয়ের বুকে
রক্তের সঞ্চালন থেমে গিয়েছিল কিছু সময়ের জন্য?
তাঁরাও শেষ বিদায় জানাবে বলেই বেষ্টনী করে তাকে ভিড় জমিয়েছে।
একাকিত্বের বোধে ক্লান্ত-অবসন্ন তাঁদের হৃদয় আজ তাঁর জন্য,
সে যদি জানতো এত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আন্তরিক নিবেদন তাঁর প্রতি,
তাহলে হয়তো শেষ বিদায়ের পূর্বে সমবেত সকলের নিকট
আবেদন রেখে যেত কিছু প্রত্যাশায়।
কত স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা সাথে, পৃথিবীর সব অপরাধ, ক্লেশ,
নিরবিচ্ছিন্ন অন্ধকার; সব পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল,
নতুন এক পৃথিবী গড়ার আশায় অথবা কখনো ভেবেছিল
দুমড়ে-মুচড়ে কুমোরের প্রতিভায় তৈরি করবে এক নিটোল পৃথিবী;
সে রোজ স্বপ্ন দেখার পর অপরকেও তাঁর আস্বাদে ভরিয়ে তুলেছিল;
তাঁরাও তাঁদের স্বপ্নকে সাথে নিয়ে পুনরায় না-দেখার প্রতিশ্রুতি নিয়ে,
দাঁড়িয়ে আছে এক অসহায় জীবনের প্রতীক হবে বলে;
একদিন এক মুঠো স্বপ্নের মধ্যে সবুজ সংকেত দেখেছিল,
আজ এই মৃত্যুর অর্থ খুঁজতে গিয়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলেছে যেন,
অন্য এক দিগন্তহীন সমুদ্রের বুকে ধূসর কুয়াশাকে দেখলো মনে হয়,
এই নিথর উন্মাদনাহীন মৃতদেহের নিকট,
যার মস্তকের পাশে জ্বলন্ত ধুপকাঠির সুগন্ধি ধূম্রকুন্ডলীর গতিপথে
ভাসে সেই মর্মরকথা, মৃত্যুর সাথে ধেয়ে গেছে তাঁর জীবনসজ্জা।
তবুও তো একদিন ভেবেছিল চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে নিভন্ত জ্যোৎস্নার সাথে
কথা বলতে বলতে আগামী দিবসের সূর্যের আকস্মিক ঊর্ধ্বতন ও নিম্নতর গতির কথা,
একদিন কোকিল ও কোকিলার কন্ঠে মুগ্ধ হয়ে
অজান্তে ডেকেছিল কানফাটা শব্দে সকলকে জাগ্রত করে,
মৃত আর না-মৃত এর মধ্যে কি এমন ব্যর্থতা,
এমন হৃদয়ে খুঁজে ব্যাখ্যা, জানে না অজ্ঞাত পাখি।
তাও জেনে ছিল একদিন ঝোপে ঝাড়ে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে,
সেই সব চেতনারাও যে কোথায় পলায়ন করেছে
নিথর মৃতদেহ ছেড়ে,
তা জানে না কেউ - তা কি দেখেনি কেউ?