ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজল
স্কুলের ছেলেরা জড় প্রার্থনা হলে ।
স্কুল ছুটির পর প্রধান শিক্ষক বললেন -
কাল ছুটি - তবে সকাল সকাল চলে এসো ,
১৫ ই আগস্ট
আমাদের কাঙ্ক্ষিত পুণ্য ভারতবর্ষের
স্বাধীনতা লাভের ছেষট্টি-তম বর্ষ
পতাকা উত্তোলন করতে হবে ।
প্রত্যেকে যে যার আবৃত্তি , গান , বক্তৃতা
আরও কয়েকবার ভাল করে অভ্যাস করে নেবে
যেন ভুল না হয় ।
অরিজিৎ তুমি নেতাজী , গান্ধীজী আর ক্ষুদিরামের
বাঁধানো ছবি গুলো দেখে নেবে ;
শুচিস্মিতা তোমার ফুলের দায়িত্ব
মনে আছে তো ?


এদের সঙ্গে দাঁড়ানো প্রভাস ।
ওর কিন্তু এসবে মন নেই
ওর এখুনি ছুটি চাই ;
সকালে কিছু খেয়ে আসে নি
রাতে বাবা মদ খেয়ে
মাকে মেরেছে ঝগড়াঝাঁটি করেছে  
মিড ডে মিল ভাল খাওয়া হয় নি ।
এখন হয়ত বাড়ি ফিরে গরম ভাত পাবে
কিন্তু কিছুতেই ছুটি মিলছে না ।
উসখুস করে প্রভাস জানান দিচ্ছিল
ওর বাড়ি ফেরার স্বাধীনতা চাই
গরম ভাত আর আলু সেদ্ধ ওকে বড্ড টানছিল ।


বেমানান ব্যাপারটি চোখে পড়ে গেল
স্কুলের রাশভারী শিক্ষক প্রীতম বাবুর ।
বক্তৃতা থামিয়ে
প্রভাসের কাছে কৈফিয়ত চাইল –
সারা ভারতবর্ষ জুড়ে যার ব্যাপ্তি
স্বাধীনতা – স্বাধীন ভারত গর্বে বুকটা ফুলে উঠে
কত কুচকায়াজ , পতাকা উত্তোলন , গান
বিপ্লবীদের স্মরণ শ্রদ্ধা , ভাষণ ইত্যাদি
আমাদের তৈরি পরিবেশে
প্রভাস যে সত্যিই হয়ে পড়েছে বেমানান ।


এত সবের ও উত্তর দিতে পারে নি
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েছিল
এত বড় ভাষণের মাঝে
কেমন করে বলবে ওর খিধের কথা
বাবার কথা , মার কথা
ওর ইচ্ছের স্বাধীনতার কথা !
এক হাতে চোখ মুছতে মুছতে
পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে
সকলের সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ পরে
যখন প্রভাস বাড়ির পথে পা বাড়াল
ততক্ষণে গরম ভাতের গন্ধটা মরে গেছে
স্কুল থেকে যেতে দেরি হল মা তো বকবেই ।
আর স্কুলের দারোয়ান চা রুটি খেতে দেরী হল
ছেলেদের হ্যাট হ্যাট করে বের করে
বন্ধ করে দিল স্কুলের বড় গেট ।
যেন তাজা প্রাণগুলোকে বের করে
রুক্ষ হাওয়ায়
স্বাধীনতা উদযাপন প্রস্তুতি করতে লাগল
তথাকথিত প্রতিষ্ঠান ।।