আমাদের ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা গ্রাম ছেড়ে
দূর কোন প্রদেশে গিয়ে বাসা বাঁধে,
গাদা গাদা টাকা ইনকাম করে
দামী দামী পোশাক পরে
বড় বড় গাড়ি চড়ে
ঝাঁ চকচকে এসি ঘরে থাকে
হিল্লী দিল্লী আমেরিকা লণ্ডন জাপান ঘুরে বেড়ায়।
কিছুতেই গ্রামে ফিরতে চায় না
অসফল খুড়তুতো জ্যেড়তুতো দাদা দিদি পাড়া প্রতিবেশী
সবাইকে ভুলে যায়।
মাঝে মধ্যে বাবা মাকে অনেক অনেক টাকা পাঠায়
কিংবা ন'বছরে ছ'বছরে এক দুবার গ্রামে আসে
অনেক অনেক জিনিসপত্র আনে
তারপর দু একদিন থেকে
আবার ফিরে যায়।
আমাদের গ্রামের স্কুলে পড়া এইসব ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা
একটুও কাদা না মেখে গোল্লাছুট না খেলে
ঘুড়ি না উড়িয়ে, টো টো করে ঘুরে না বেড়িয়ে
শুধু মুখ গুঁজে পড়াশুনা করে
তাক লাগানো রেজাল্ট করে
হিল্লী দিল্লী কিংবা লণ্ডন আমেরিকায় বা জাপান জার্মানে
বড় বড় পোষ্টে বিলাসবহুল অফিস ঘরে বসে
কি করে?


তাদের কি শুধু শুধু গুচ্ছের টাকা দেয়?
তারা কি আমাদের মত বউয়ের হাতের রান্না খেয়ে
পান চিবোতে চিবোতে অফিসে যায়?
দু কলম কি কাজ করলাম কি করলাম না
তারপর আহ্লাদে ইউনিয়ান অফিস ঘুরে বাড়ি ফিরে আসে?
আমরা কি জানি এই সব ব্রিলিয়ান্টদের
ল্যাপটপে কি কি ভরা থাকে?
কি কি খুঁজতে খুঁজতে আরো আরো কত ব্রিলিয়ান্ট
শুধু পড়েই যায় আর পড়েই যায়
আর পড়েই যায়।


পড়তে পড়তে আমাদের এইসব ব্রিলিয়ান্ট ছেলেরা
আর সব অন্য অন্য দেশের ব্রিলিয়ান্টদের সাথে একজোট হয়ে
চাঁদে মহাকাশে সমুদ্রের তলদেশে অনন্তে অন্তরীক্ষে
আরো সব অনেক কিছুর সন্ধান করে,
আমাদের হাতে প্রযুক্তি এনে দেয়
আবিষ্কারের টিকা টিপ্পনিতে সভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যায়।
আমাদের গ্রামের পাকা রাস্তা আলো উন্নত চাষবাষ
জীবন ধারণের আধুনিক যোগসূত্র
সেইসব ব্রিলিয়ান্টদের হাত ধরেই
ফুলে ফলে বিকশিত হয়েছে।


এই সব ব্রিলিয়ান্টদের জগতে অন্য এক উচ্চতা তৈরি হয়
অন্য এক সুদূরের উপাখ্যান লেখা হয়
অসাধারণ তাৎপর্যের ব্যাখ্যা ঘোরাফেরা করে;
আমরা তাকেই বলি আবেগহীন
পৃথিবীর মোহ মায়া মমতাবিচ্ছিন্ন এক আশ্চর্য জীবন।
মা বাবা দাদা দিদি মামা কাকা পাড়া প্রতিবেশী
কেউ পেছনে পড়ে থাকে না,
তারও ভাবনার মধ্যে সবাই থাকে।
তারও মনের ভেতরে এক যন্ত্রণা তৈরি হয়
বাঁচার পেছনে দৌড়তে দৌড়তে
তাদের অনেকে সফল হয় অনেকে সফল হয় না
অনেকে অসম্ভবের দরজায় অনাদর হয়ে বেঁচে থাকে।


এরকম সব সফল ব্রিলিয়ান্টরা
যারা আমাদের চেতনা দিয়েছে প্রযুক্তি দিয়েছে প্রতিষেধক দিয়েছে
চিকিৎসা রসায়ন পদার্থ অর্থনীতি শান্তি প্রেম দিয়েছে
তারা তাদের বাবা মাকে শেষ বয়সে দেখত কি না
মারা গেলে খবর পেয়ে ছুটে আস্ত কি না
দাদা দিদি কাকা কাকী পাড়া প্রতিবেশীদের সঙ্গে
হাত পা ছড়িয়ে আওআও করে গল্প করত কিনা
গবেষণার সব কিছু ছেড়ে ছুঁড়ে
তার ছিটে বেড়া দেওয়া গ্রামে এসে বসবাস করত কিনা
যেকোন আটপৌরে লোকের মত
বড় কোন হোটেলে নেমতন্ন বা চাইনিজ খেয়ে
ঢেকুর তুলে পার্কে গিয়ে প্রেমিক প্রেমিকা বা ছেলেমেয়ের হাত ধরে
স্ফূর্তি করত কি না
আমরা জানি না।
তবু ব্রিলিয়ান্টদের মাথার ভেতরে দয়া মায়া প্রেম নেই ভেবে ভেবে
পাশের বাড়ির মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়ানো
রকবাজ ঝান্টা ধরা হিংসে করা গোপালকে দেখে
মাটিকে মাটিতে রেখে দোষ দিই।
বলি ভাল থাক। ভালো আছি আমরা।