মোঃ আরিফুর রহমান (ডিজিটাল কবি)
খাবারের সন্ধানে  একদিন ক্ষুধার্ত একটি কাক অস্থির হয়ে এ ডালে ও ডালে, মাঠ থেকে মাঠে   ঘুরছে।কাকটি দেখতে ছিল অন্যসব কাকের চেয়ে কদাকার। অনেক সময় ঘুরে কোন খাবার পায়নি সে।
কোন একটি বাড়ির রান্নাঘরে রান্না হচ্ছে। সেখানে গিয়ে জানালার উপরে দাঁড়ালো কাকটি। রাঁধুনি এক মহিলাকে কাকটি বললো, “ কা, কা, দয়া করে আমায় কিছু খাবার দিন। আমি খুব ক্ষুধার্ত।” রাঁধুনি মহিলা চিৎকার করে কাকটিকে বললো, “দূর হ, তুই দেখতে যেমন, তোর গলাটাও তেমন।” কাকটি কষ্ট পেলো। সে আর কোন ডাক দিলনা।চলে গেলো সে।
এরপর আরও কয়েকটি বাড়ি গেল। সবাই তাকে দেখে বিরক্ত হল। অনেকেই ঘৃণা করে বলে তার চেহারার দিকে তাকালো  এবং একইরকম উক্তি করলো। কাকটি খুবই কষ্ট পেলো। নিরাশ হয়ে ফিরে আসলো।
এরপরে গেলো একটি খাবারের দোকানে। সবাই খাবার খাচ্ছে। সেও হয়ত কিছু খবার পেতে পারে এই আশায় দোকানের পাশেই বসলো। সে একটি লোককে দেখলো টাকা দিয়ে কিছু খাবার কিনছে। কাক টাকাটিকে ভাবল একটি কাগজ। কারণ সেই রাস্তায় সব সময়  কাগজ পরে থাকতে দেখে। তাই সে ওটাকে কাগজই ভাবলো।
কাকটি সেখান থেকে এবার উড়ে গিয়ে রাস্তা দিয়ে একটি কাগজ নিয়ে এলো মুখে করে। কাগজটি মুখ থেকে রেখে দোকানদারকেও একই কথা বলে খাবার চাইলো। দোকানদার এবার কাকটিকে দেখে বিরক্ত হল। সে বললো, “ঐ দূর হ, কালো কাক। ইস্, তুই আমার খাবারে নজর দিলি। আজ আমার আর বেশি বিক্রি হবেনা।” এই বলে দোকানী কাকটিকে তাড়িয়ে দিলো।
কাকটি আবারো খুব কষ্ট পেলো। সে উপরের দিকে তাকিয়ে খোদার উদ্দেশ্যে বললো,

“তুমি আমায় খাওয়াও খোদা, থাকি আমি  তোমার ভূমি,
তুমিই গড়েছ আমায়, তোমারই সৃষ্টি আমি।
তবু কেন মিছেমিছি  কালো মনের  মানুষগুলি  
কালো বলে, কাদায় আমায়  মুখে ছাড়ে কালছে বুলি?”  


কোন কালোটি কালো বেশি অসুন্দরের মাপকাঠিতে?  
কালছে বরণ  কালো মনে, নাকি কালোর চেহারাতে?  
কোনটা বেশি অপরাধের বিবিকের ঐ কাঠগড়াতে?
কালো বরণ দেখতে হওয়া নাকি কালো বরণ অন্তরেতে?


ধবল বরণ চাই অন্তর, হই না কালো বাহির চোখে
সবাই যেন দেখে হৃদয়, না দ্যাখে ঐ বাহিরটাকে।


আমি কাক হইনা যত সবার চোখে অসুন্দর
যতন করে গড়বো আমি স্বর্ণ দিয়ে এক অন্তর। “


কাকটি উড়তে উড়তে চলে গেলো অন্য একটি বাড়ির সামনে। এবার সে বাড়ির দেয়ালে বসলো। সে দেখল দেয়ালের এ পাশে বাড়ির সীমানার ভিতরে একটি বিড়াল। ওটি ঐ বাড়ির পোষা বিড়াল।বিড়ালটি একটি রুটি খাচ্ছিলো।  কাকটি এবার ঐ বিড়ালের কাছে গিয়ে বললো, “ আমাকে একটু রুটি দাও, আমি কাল থেকে কিছু খাইনা।”
বিড়ালের খুব দয়া হল। সে বললো, “ ঠিক আছে, তুমিই এটা খাও।”

কাকটি বিড়ালের দেওয়া রুটি  খেয়ে নিলো। এবার কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলো কাকটি।
কাকটি এবার বিড়ালের উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞচিত্তে বললো, “ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ বন্ধু, মানুষের অনেক আছে, তবু ওরা দিলোনা। তোমার এই সামান্য খাবার থেকেই তুমি আমায় দিলে।”
বিড়ালটি বললো, “ কে বলেছে আমি তোমায় দিয়েছি? এটা তোমার জন্যই বরাদ্ধ ছিলো, আর তা রেখেছে ঐ মানুষগুলোসহ আমাদেরও যিনি খাওয়ান তিনিই।”

বিড়ালের কথায় খুশি হল কাকটি। এবার সে বিড়ালের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
একদিন ঐ কাকটি সেই বাড়ির রান্নাঘরের পাশের একটি ছোট ডালে বসলো যে বাড়ির  গৃহিণী তাকে কুৎসিত বলে তাড়িয়ে দিয়েছিলো । হঠাৎ তার চোখে পড়লো সেই রান্নাঘরের একটি বেড়ায় আগুন ধরে গেছে। সে  দেখল কেউ নেই। এবার সে কা কা আওয়াজ করতে লাগলো একের পর এক।
বাড়ির সেই গৃহিণী আবার হাতে লাঠি নিলো কাকটাকে তাড়িয়ে দেবে। রান্না ঘরে গেলো গৃহিণী। গিয়ে দেখলো আগুন ধরে যাচ্ছে রান্না ঘরে। এবার সে নিজে কলসি দিয়ে পানি ঢেলে দিলো রান্নাঘরে। প্রাথমিক অবস্থায় নজরে আসায় আগুন সহজেই নিভানো গেলো এবং রান্নাঘরে তেমন কোন ক্ষতি হলোনা।
মহিলাটি কাকটির দিকে তাকাল এবার আর চিন্তা করলো, “ যে কাক একদিন ঘৃণা করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো সে কাকের কারণেই আজ বিপদ থেকে রক্ষা পেলো।”
আরেকদিন ঐ কাকটি গেলো সেই দোকানীর দোকানের কাছে যে তাকে রান্নাঘরের ঐ গৃহিণীর মত তাড়িয়ে দিয়েছিলো ঘৃণা করে।
কাকটি দোকানের কাছে ছোট একটি গাছের ডালে বসলো। তখন দুপুর। দোকানী তার দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাবে দুপুরের খাবার খেতে।
দোকান বন্ধ করলো সে। তালা লাগালো দরজায় ঠিকভাবে। কিন্তু তালা লাগিয়ে চাবিটা দোকানের পাশে বসার টুলে রেখে দিলো।এরপর দোকানের জানালার কাছে গিয়ে ভালো করে দেখে নিলো জানালা লাগিয়েছে কিনা। জানালা আগেই লাগিয়েছিল সে। এবার দেখার পরে সে টুলের উপর থেকে চাবি নিতে ভুলে গেলো।
দোকানী চাবি ছাড়াই যাচ্ছে বাড়ির দিকে। বিষয়টা সেই কাক লক্ষ্য করলো। সে এবার চাবিটার কাছে গিয়ে মুখ দিয়ে সেটা তুলে নিলো।
চাবি নিয়ে উড়ে গিয়ে সে ঐ দোকানীর সামনে দাঁড়ালো। দোকানী প্রথমে বিরক্ত হলো কিন্তু পরক্ষনেই লক্ষ্য করলো কাকটির মুখে একটা চাবি।
এবার দোকানীর মনে পড়লো ফেলে আসা চাবির কথা।
কাকটি এবার মুখ থেকে চাবিটা রাখলো দোকানীর সামনে।
দোকানী অবাক হয়ে গেলো কাকের বুদ্ধিমত্তা দেখে। সে এবার চিন্তা করলো, “ যে কাককে সে কুৎসিত ভেবে ঘৃণা করতো সে আসলে তার চেয়ে অনেক ভালো অন্তরের।”
দোকানী বুঝতে পারলো সুন্দর অন্তরই আসলে শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য।  
কাকটি এবার উড়াল দিলো তার গন্তব্যে। দোকানী কাকটির চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।


( বিঃদ্রঃ- এখানে গল্পটির নাম 'কাকের সৌন্দর্য ' যেহেতু কবিতার আসর তাই এখানে অন্তর্ভুক্ত কবিতার নামটি দিলাম। কবিতার সাথে গল্পটি এসে যাওয়ায় কবিতার সাথেই এটি দিলাম যা কবিতাটির বিষয়বস্তু  বুঝতে সাহায্য করবে। কষ্ট করে সময় নিয়ে পড়তে হবে সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।)