এই গোরস্থানে আমি পড়ে আছি একা—
নিস্তব্ধ এই শ্মশান।
যারা ছিলো—খুবই সহজ হিসাব—আজ তাঁরা নেই।
আমি অবশ্য ভাবছি—হাতে আরেকটি সিগারেট ধরে—
যারা গেলো, তাঁরা কি মরেই গেলো?
নাকি তারা নেই, কেননা তাঁরা মৃত—সমাহিত সুমহান।
এই শ্মশান কি শবপোড়া স্থান?
নাকি এই গোরস্থান দেহত্যাগ হেতু হয়েছে বিজন?
আরো বহু আগে এখানে অনুভূতি ছিলো—
সুখ ছিলো, ছিলো দুঃখ—
কখনোসখনো হয়তো শোনা যেতো পাখিদের কুহুতান।
আমি অবশ্য অবগত এব্যাপারে যে এই কঠিন কঠিন শব্দ
অনুভূতির উদ্রেক ঘটানোর ক্ষেত্রে বলা চলে ব্যর্থ।
তবে কি এও নয়—যে এই দোষ কেবলই এই কবির একার নয়?
কেননা যে নৈশব্দ অনুক্ষণ বিরাজমান এখানে
তা যেকোনো অনুভূতি-প্রবণ আত্মাকেও নিরাত্মা করে দিতে পারে নিমিষেই।
তাই কবি ভাবতে ব্যর্থ—ঠিক কি আবেগ তিনি পাঠককে দিতে চান?
কবি জানেননা এই কবিতায় সুখ অনুভূত হওয়া উচিৎ
নাকি অনুভূত হওয়া উচিৎ দুঃখ—
নাকি জীবন এতোটাই সুক্ষ্ম যে এ দু’য়ের মধ্যে আদোতে কোনো তফাৎ-ই নেই?
কবি এও জানেননা—মানুষ মরে গেলে এই শ্মশানে আসে?
নাকি এই গোরস্থানই মেরে ফেলে মানুষকে?
কবি জানেননা—সেই গুরুদেব বাউলের মতোই—
কোনটা সঠিক—বামুনের শ্মশান নাকি হুজুরের গোরস্থান?
নাকি কবি সচেতন এ ব্যাপারে যে,
পাঠকরা চালিত হয় খুব সহজেই শব্দের ব্যবহারে;
আর তাই তিনি একই সাথে খুশি রাখতে চাচ্ছেন হিন্দু আর মুসলমান—উভয় গোষ্ঠীকে?
এতে অবশ্য নাখোশ হতে পারেন খ্রিস্টান, বৌদ্ধ কিংবা জৈনরা—
তবে কবি জানেন, এঁরা এতোটাই সংখ্যালঘু এই কর্ষিত ভূমিতে,
এঁদের ব্যাপারে খুবেকটা মাথা না ঘামালেও চলে!—
নাকি বলা চলে, এই পৃথিবী ঠিক একারণেই মৃতদের স্থান?
কবি অবশ্য এতোকিছু ভাববেন না,
তিনি এতোকিছু লিখবেননা—
কেননা এই দায় বর্তায় ঐতিহাসিক কিংবা বৈজ্ঞানিকের প্রতি।
এই কবিতা যিনি লিখছেন—অর্থাৎ আমি—
সদ্যাবিষ্কৃত এই ধ্বংসস্তূপে তিনি আমন্ত্রিত একজন ব্যর্থ কবি মাত্র—
তাঁর কোনো অধিকার নেই কিছু করবার, কিছু ভাববার, কিছু চাইবার—তিনি শুধু দেখতেই পারেন—
তিনি চাইলেও পারেন না ঠিকঠাক মতো দু’চারকলম লিখতে।
তবুও তিনি ভাবছেন—এই শহর কি ধ্বংস করেছিলো মানুষ?
নাকি এই শহরই ধ্বংস করেছিলো মানুষকে?
লেখার এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও তাই তিনি লিখেছেন।
এই ধৃষ্টতা দেখানোর জন্য ক্ষমা করবেন পাঠকগণ—
মনে রাখবেন, আমি স্রেফ এক করুণ ব্যর্থ কবি।


১১ নভেম্বর, ২০২৩।