একলা তুমি দাঁড়িয়ে আছো -
আকাশকে ভালোবেসে শত সহস্র বছর ।
তোমার ধূসর নীলাভ গায়ে, ঘন সবুজ বনানী ,
দুরন্ত ঝর্ণা, পাখিদের কলতান,
নির্জনতার নিস্তব্ধতায়-
হয়েছো তুমি সালঙ্কারা।

তোমার তুষার শিখর সিঁথি রাঙিয়েছো-
সূর্যোদয়ের রক্তিম সিঁদুরে ।
সাদা মেঘের ওড়নায় ঢাকা সালঙ্কারা-
রূপের ডালি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো রূপের রানি, সে-ই অনাদিকাল হতে।
যুগ-যুগ ধরে তোমার ঐ রূপের অমোঘ টানে-
আমরা ছুটে যাই তোমার কাছে।


আজ কতদিন হোলো-
আমরা ঘরবন্দী।
তোমাকে কাছে না পাওয়ার ব্যথা-
ঐ সুন্দরকে না ছুঁতে পাওয়া অতৃপ্ত আত্মার-
ব্যাকুলতা জানাতেই-
আজ, এই চিঠি লিখছি তোমায়।


আমার প্রাণের দোসর ,
কেমন আছো তুমি?
তুমি বলবে 'ভালোই আছো আমি'।
দীর্ঘ কোলাহলের পর,
একাকীত্বের আঙিনায় -
একটু পেয়েছো অবসর ।
নিজেকে সময় দেওয়ার।
এবার নাও তুমি একটু বিশ্রাম, ঘুমোও একটু তুমি -
সমস্ত ক্লান্তি, অবসাদ ঘুচিয়ে একটু শান্তির রাজ্যে-
দাও পাড়ি।


এখন তো নেই কোনও কোলাহল,
কোনো জমায়েত,
কোনও আড্ডা,
নেই কোনও নিস্তব্ধতার-
পর্দা সরানো শব্দের সমাহার, তোমার সংসারে।
একলা পাহাড় তুমি,
এখন একলাই তো আছো বেশ- খোশ মেজাজে।


জানো, আমরা সবাই এখন বন্দী ।
অতি সতর্কতার এক হিমশীতল অন্ধকার কারাগারে।
নিজের একান্ত কাছের মানুষকে স্পর্শ করা তো দূরের কথা-
অবসরে, মুখোমুখি বসে-
দু- দণ্ড গল্প করারও সাহস হয়না মনে।
মুখে মুখবন্ধ, মাথা চোখ ঢাকা নানান রঙের নানা বর্মে।
পাছে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে,
কাছের ঐ মানুষটির শরীরে।
স্পর্শে কিংবা ভাষ্যে।
ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি কোকুনের মধ্যে।
আপনজনের মৃত্যুভয় গ্রাস করছে প্রতিক্ষণে।
বেঁচে থাকাটাই আজ একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের জীবনে।
মনুষ্যত্বকে আজ বিকিয়ে দিয়েছি স্বার্থপরতার কাছে।
আর্তকে আজ বিপদে দেই না সাহায্যের হাত বাড়িয়ে।
বাড়ির গেটের ভিতর থেকেই -
হাত নেড়ে জানাই-
শেষ বিদায় সম্ভাষণ।


কিন্তু তুমি-
আমার প্রাণের দোসর,  
জানি, আজ খুব ভালো আছো তুমি।
রোজ দুপুরের পরে,
মেঘবালিকার আদর মেখে গায়ে-
তুমি করছো খেলা লুকোচুরি,
ঐ নীল আকাশ আর ঘন কুয়াশাদের সাথে ।
ঝড়ের মাতলামি আর বৃষ্টির উল্লাসে-
আজ তুমি মাতোয়ারা।


নিস্তব্ধ জঙ্গল, পাহাড়ি নদীর শান্ত কুলকুল শব্দ,
রাতের আঁধারে জোনাকির রোশনাই-
কি সত্যিই ভুলিয়ে দিতে পারে?
আমার ভালোবাসাকে?
আমাদের ভালবাসাকে?


হ্যাঁ, আমি মানছি,
তোমার সাথে আমরা হয়তো অনেক-অনেক- অন্যায় করেছি ।
অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়।
আমাদের কোলাহল -
তোমার শান্তিতে আঘাত হেনেছি
তোমার গায়ে নোংরা ছড়িয়ে আমাদের চলে আসা-
তোমাকে জয়ের দুর্নিবার নেশা,
এ সবই তোমাকে কষ্ট দিয়েছে।
তোমাকে মুখ বুজে কাঁদতে বাধ্য করেছে।
তাই হয়তো, আজ তুমি নিচ্ছ প্রতিশোধ।  


তবুও বলবো,
আমাদের ভালোবাসায়-
খামতি ছিল না কোনো।
তাই তুমি কি পারবে?
আমাদেরকে ছেড়ে থাকতে?
আমাদেরকে ভুলে থাকতে?
একা-একা সুন্দর করে সাজতে?
তুমি কি সোচ্চারে বলতে পার?
এতো ভালোবাসা, এতো তারিফ-
সুন্দরের এতো প্রশংসা ছাড়া তুমি সম্পূর্ণ?


আমি জানি,
একদিন তুমি সকল গ্লানি মুছে ফেলে-
আবার আমাদের তোমার কোলে তুলে নেবে।
আমাদের সমস্ত ভুল ক্ষমা করে দিয়ে-
তোমার ঐ বিশাল হৃদয়ে আবার তুমি আশ্রয় দেবে।
তুমি যে এই সৃষ্টির ক্ষমাসুন্দর স্রষ্টা।
আমার প্রাণের দোসর,
আমার স্রষ্টা ভালো থেকো তুমি।
ভালো রেখো তোমার সৃষ্টিকে।।