প্রিয় কবি,
তোমার সাথে পরিচয় -
সেই ছোটোবেলায় ।
সহজ পাঠে।
আমাদের ছোটোনদী
আর হাঁটু জলের সাথে।


শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে যখন পৌঁছলাম ,
তোমার কবিতা, গল্প, নাটকের প্রতি অনুভব করলাম -
এক দুর্ণিবার আকর্ষণ।
যদি ভালােবাসা মানে হয় কোনো অমোঘ টান,
তবে তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা।
আমার প্রথম প্রেম।


কৈশোর পেরিয়ে যখন যৌবনে পা দিলাম -
সেখানেও তুমি।
মানুষটি প্রথম যখন আসি আসি করছে-
তখন সেও তোমার কথাতেই জানাল আমায় ,
'সখী ভালোবাসা কারে কয়'-
সেদিন লজ্জায় রাঙা হয়ে মনে মনে স্মরি তোমাকেই ।
তোমার কথাতেই বলি 'আমারও পরাণে যাহা চায়'।


এভাবেই কবি, তুমি জীবনের পথে চলতে-
আনন্দে - বিষাদে,
প্রেমে- বিরহে ,
আকাশ, বাতাস, পাখি, গানে-
আধ্যাত্মিকতায় কিংবা জীবন দর্শনে,
তুমিই হয়ে উঠলে আমার বিশ্বাস আর ভরষার-
এক চলমান পথ।
আমার পথের দিশা।
আমার জীবনের ধ্রুবতারা।


বাস্তব জীবনে, চারপাশের মানুষগুলোর -
ক্ষুদ্রতা, নীচতা,যখন মনকে ক্ষত- বিক্ষত করে,
তখন কবি, আমি শরণাগত হই তোমারই।
'নিশিদিন ভরষা রাখিস হবেই হবে'।
তোমার এই মন্ত্রেই দীক্ষিত হয়ে।


আমাদের মনের কবি,
আমাদের মন যা -চায় ,
তোমার কাব্য-ভাণ্ডারে রেখে গেছ তার সবটুকুই।


যদি প্রেম নিয়ে কথা বলি,
তবে শেষের কবিতায় তুমি সৃষ্টি করেছো-
অমিত-লাবণ্যর এক অমর প্রেম।


যদি অবৈধ প্রেমের কথা ভাবি
তবে চোখে প'ড়ে চোখের বালি।


আবার তোমার সৃষ্ট ত্রিকোণ -প্রেম, চতুষ্কোণ ।
মানসিক দ্বন্দ্ব আবর্তনের এক অনবদ্য সৃষ্টি।


প্রিয় কবি,
মৃত্যুর সাথে তোমার সাক্ষাৎ হয়েছে বার বার।
স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, নতুন বৌঠান একের পর এক -
প্রিয়জন বিয়োগের সাক্ষী থেকেছো তুমি ,
বৌঠানের মৃত্যুর পর তুমি গেয়ে উঠেছিলে -
'তুমি কি কেবলই ছবি'-
যা আজও হয়ে আছে এক কালজয়ী সৃষ্টি।
এভাবেই তুমি ব্যথাতুর হৃদয়েও থেকেছো দুর্ভেদ্য।
আর তোমার সৃষ্টির ভাণ্ডার করেছো সমৃদ্ধ।


প্রিয় কবি,
এখন পঁচিশে বৈশাখে আর বাইশে শ্রাবণে,
কত গান, নাটক, কবিতায় -
রবি স্মরণ পালিত হয়।


তুমি আছো আমাদেরই মাঝে।
তোমার সৃষ্টিতে, গানে, কবিতায়-
আছো সবুজে, শ্যামলে,ধুলোতে-মাটিতে।
আকাশে, বাতাসে, আছো তারায় তারায়।
অনাড়ম্বর সন্ধ্যায়।
আমাদের চিন্তায় , চেতনায়।


এভাবেই তুমি থাকবে বেঁচে চিরদিন।
আমাদের সুখ-দুঃখের দিনলিপিতে প্রতিদিন।