রাজপ্রাসাদ, রাজভোগ ছাড়ি বিবাহের পরে
রাম-সীতা চলেন বনে চৌদ্দ বছর তরে।
নানা বন, পথ অতিক্রমি  তের বছর পর,
পঞ্চবটী বনে সীতা যেন মোহান্ধ হন।
সোনার হরিণ লাগি, রামে বিবশ করিল,
তারি ফাঁকে লঙ্কারাজ সীতায় হরিল।
সীতা কান্নায় বুক ভাসায় স্বামীর বিরহে,
সীতা লাগি রাম কেবল হাহাকার করে।
অবশেষে রাম-রাবণে ভীষণ যুদ্ধ হয়
রাবণ বধী রাম-সীতার পুনর্মিলন হয়।
চৌদ্দ বছর এই ভাবে অতিবাহিত করি
সদল বলে হাজির হন অযোধ্যা নগরী।
রাম-সীতার আগমনে উল্লাসিত সবে
হাতে হাতে আলো সবার, শঙ্খ-ধ্বনি করে।
উল্লাসে মত্ত সবে যেন দীপাবলি
আতসবাজি জ্বালায় আর দেয় কোলাকুলি।
কাল বিলম্ব নাহি করে ভ্রাতা ভরত রাজা
রাজ্যভার সঁপেন দাদায় রাজমুকুট দিয়া।
ব্যস্ত হয়ে পরেন অতি রাম রাজা হয়ে
যেন প্রতি প্রজা চলিতে পারে সুস্থ-স্বস্থ হয়ে।
পতিপ্রাণা সীতা এবার গর্ভবতী হন
স্বামী সঙ্গ পান তিনি কদাচিৎ কখন।
কৌতূহলী সখী,দাসী, আত্মীয়-স্বজন
নানা ভাবে শুধেন তারে লঙ্কার জীবন।
পতি হারা দুঃখ ভরা সেই ভীতিময় জীবন
বিরক্ত হন মাতা তাহা করিতে বর্ণন।
প্রজা বতসল রাম রাজা, ভাবেন অশেষ
কেমনে দেন তাঁরে নির্মল পরিবেশ।
হেন কালে এক প্রজা ভার্যায় কন রেগে-
পর-পুরুষ সঙ্গ করি, আসিয়াছ ফিরে,
তুমি অসতী, নীচ, নিষ্ঠা-হীন নারী,
আমিতো নহি রাম, তমা-সঙ্গে পুনঃ ঘর করি।
এমন মন্তব্য- ভীষণ কুরুচি, অপমান কর
বাতাস-বাহী হয়ে যেন ঝঙ্কারে রামের অন্তর।
ঘটনা যেন নিয়ে এলো সহজ সমাধান
ঘরণী লাগি সুস্থ পরিবেশ আর প্রজার মান।
ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিয়ে লক্ষণেরে কন
করিতে স্থানান্তর সীতায় বাল্মীকি-আশ্রম।
রাম কান্দে, সীতা কান্দে, কান্দে গৃহবাসী
করুণ পরিবেশে কান্দে যত পুরবাসী।
নির্মম সিদ্ধান্ত, তবু মন্দের ভাল
স্বামী-নিন্দা পরিবেশ চেয়ে আশ্রম ঢের ভাল।
স্বামীর ধ্যান, স্তুতি করেন আশ্রম পরিবেশে
গভীর ধ্যানে মগ্ন হন বাল্মীকির সনে।
সিদ্ধান্ত নিয়ে যদি, প্রশ্ন করে কেহ
নির্ভুল, কঠিন বাস্তব, করেন মন্তব্য।
সকলের পালক তিনি, তিনি পুরুষোত্তম
দ্বন্দ্বাতীত ত্রিকালজ্ঞ, তিনি অভ্রান্ত।
মোর লাগি নাহি দিব অন্য কারো দোষ
সোনার হরিণ বায়না করি, যত দুর্ভোগ।
দুঃখ মোর জন্ম লগ্নে, জানিনা কাহার কন্যা
জন্মের পর কোল দেন রাজা জনক পিতা।
যুবরাজ পতি মোর, ভোগে নাহি রাজ-সুখ
এ সময়ে আমি একা, ছাড়ি স্বামী-সঙ্গ-সুখ।
স্বামী তো মোর নহে তেমন, তিনি অযোধ্যাপতি
তাঁর কত কষ্ট বল, আমি ছাড়া তিনি।
তাঁর স্নেহ, মমতা আর প্রাণকাড়া টান
যে পেয়েছে ক্ষণিক সঙ্গ, বোঝে তার প্রাণ।
তাঁর সেবা থেকে বঞ্চিত আমি, আমি অভাগিনী,
নিয়ত প্রার্থনা জানাই- তাঁর শুভকামনা করি।