স্বর্ণলতার সাথে নদী পাড়ের হিজল গাছটার প্রেম ছিলো
হয়তো সমান্তরাল নয়তো কার্য-কারণ;
তবু ছিলো একটা সম্পর্ক একপেশে হলেও-
অন্তত এক আকাশের নিচে ছয়ঋতু কাটাবার মতোতো ছিলোই,
গেছে আশ্বিনী বাওয়ারের ঝাপটাটা গায়ে-গা জড়াজড়িতে পার হয়েছিলো ;
ওম শৈত্য যাই হোক কেটে গিয়েছিলো বেশ গত শীতটাও।
এদিক দিয়ে কতই তো যেতে হয়, আসতে হয়-
চোখে পড়তো ওদের অভিমানী মুখ, ভীষণ হাসি খুশি সুখের ঘর।


এখন কেঁপে উঠে বুক, কী বীভৎস রূপ!
চোখ তোলে তাকাবার জো নেই আর-
পাতা হীন রিক্ত-জীর্ণ আধমরা নিঃসঙ্গ গাছটা মৃত্যুর দোয়ারে,
পাশের বনোজামের উঠতি বয়সী গাছটায় সেজেছে স্বর্ণলতার আয়েশী সংসার!


প্রেমছিলো জামরুলের পাতার ফাঁকের ঐ আটপৌরে আকাশটারও
একদল উদ্বাস্তু মেঘের সাথে দেখেছিলাম গভীর ভাব;
হতো একের রঙে অন্যে রাঙা, কী মিতালী, কী সখ্য!
নিশি যৌবনা সৌর কন্যাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে
অনায়াসে মেঘের সাথেই বিহারে যেতো হিমালয়ের ওপারে!


মাত্র তো ক'মাস হলো!
এখন কে বিশ্বাস করবে সেই সব কথা ?
খা খা পড়ে আছে শূন্য বুক,ঝিমুচ্ছে অলস নিথর বিমর্ষ আকাশ,
যেনো বিগত যৌবন বৃদ্ধ এক, অস্থি চর্মসার কুঠরাগত চোখ!
অনেক নিচে অবারিত কোমল জমিন, সবুজ মাঠ, বনভূমি।
এখন মেঘেরাও এখানেই বেঁধেছে ঘর,কখনো কুয়াশা হয়-
আবার কখনো দিগন্তের উপর গোধূলি গড়ে, রঙে পুঁড়ায় নতুন হৃদয়!
নিঃসঙ্গ আকাশটা সেই সুদূরে একাই আছে পড়ে।


হয়তো এখানেও একটা প্রেম ছিলো এই ব্রহ্মপূত্র পাড়ে,
জোয়ারের নদীতে, নয়তো আমার বুকের গভীরে;
গেছে বর্ষার জলের দাগগুলো দগদগে ক্ষতের মতো ফোটে আছে নদীর দেহে,
সামনে অবারিত চর ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে হয়ে যেনো-
আমার হৃদয় অবধি ছড়িছে গেছে, হয়তো ছড়াবে আরো বহুদূর!


পাশেই মৃতপ্রায় হিজল গাছটা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে ,
দূরে উদাসী বিমর্ষ আকাশ আর সামনে বালু চরে আটকে যাওয়া নদী!
বেশ কিছুক্ষণ হলো গোধূলি ছাড়াই সুর্য্যটা ডুবলো,
নদীর ঐপাড়ের সিলভার ক্যাসেল আর রিভার প্যালেসের ঝাড় বাতি গুলোও জ্বলছে,
হাতে হাত, চোখে চোখ, হৃদয়ে হৃদয় সেখানে অগনিত প্রেম,
আর নিঃসঙ্গ আমি বসে আছি এখানে, এই ব্রহ্মপূত্র পাড়ে;
সামনেই অবারিত চর, ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে হৃদয় গভীরে।।