বেশ তো ছিলাম,
একঘেয়ে জীবন,   তবুও  যেন চলে যাচ্ছিলো।
পড়ালেখা, চাকরির খোঁজ;-
আর বিকালের টিঊশন-  এই নিয়ে।
স্বপ্ন ? সে দেখার সময় কোথায়!
প্রতিদিনের বেঁচে থাকার সংগ্রামে
ভুলে গিয়েছিলাম আমারও একটা জীবন আছে।
রোজ আশা নিয়ে ভাইভা দিতে যাওয়া,
পরিপাটি পোশাকের নিচে  চামড়ার ভেতরে
আমার ও শরীর আছে;-   ব্যথা লাগে।
আমার দেহের রক্ত মানুষের মত লাল;
আমার ইন্দ্রিয় এখনও সাঁড়া দেয় অপমানে-
ব্যথিত হৃদয় ডুকরে কেঁদে ওঠে।


ইন্দ্রাণী, শৈলজা,  পিয়ালীরা ছেড়ে চলে যায়;
ভবিষ্যতের আশায়।
নিরাশায় ভরে ওঠে আমার ভবিষ্যৎ।
এক এক করে নিভতে থাকে;-
আমার অন্ধকার ঘরের এক একটি প্রদীপ।


সমাজের দরজা গুলো একে একে,
রুদ্ধ হতে থাকে   চোখের সামনে;
ব্রাত্য হয়ে উঠি সকল সামাজিকতা থেকে।
করুণার ঝর্ণা ধারায় স্নাত হই অবিরত।
নাহ! আমাকে কেউ ঘৃণা করেনা, হিংসা করেনা;-
দয়া করে! করুণা করে!
যে পিষেমশায় বাবার মৃত্যুর পরেও আসেনি-
এখন প্রায়ই তার ফোন পাই;-
আদ্রো কণ্ঠে ইথারে ভেসে আসে এক রাশ
                                         সমবেদনা।
বন্ধুদের কেউ কেউ নতুন চাকরি পেয়ে ফোন দেয়,
উচ্ছ্বাসে জানায় তার     'জয়গাঁথা'।
আমাকে ও নিরাশ করেনা-   'ধৈর্য আর প্রচেষ্টা'র
অশেষ মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করে শোনায়।
দু'তিন বছর আগেও  যে বন্ধুর দুএক্টা সিগারেটের বিল
আমাকে দিতে হত,         এখন সেও শোনায়-
কলিগদের  কেউ কেউ গাড়ি কিনেছে;
তার না কিনলে আর মুখ থাকেনা-এ নিয়ে
অনেক আফশোষ!
ব্যাংক লোন পেতে কী কী জানি সমস্যা।
আমি অভয় দিয়েছি, শান্তনা দিয়েছি  'তারও হবে'।


পাশের গ্রামের,
হরিদাসী মাসির সাথে আমার  ঠিক পরিচয় নেই;
তবু তাকে আমি অনেক দুঃখ করতে দেখেছি-
মায়ের 'বৃদ্ধভাতা'র সব টুকু এখনও আমি নেই কিনা;
সে ভাবনা তাকে উদ্বিগ্ন করে।
ওই বাড়ির বছর কয়েকের ছোট ছেলেটা
ইন্টারের পরে যার আর আগায়নি ;
সেও আজ কী জানি একটা 'সরকারি জব' করে।
তার জয়ধ্বনি সারা গ্রামময় সবার মুখে ফেরে।
যদিও নিন্দুকেরা অন্য কথা রটায়।


শ্যামল কাকুর বাবা, ভোলা দাদু;- সত্তুর প্রায়
চোখের জ্যোতি শ্রবণ শক্তিতে পুষিয়েছেন;
আলত করে আমার মাথায় হাত রেখে বলেন-
'একটুতো দেখা করতে পারতে রামু'র সাথে
ওর নাকি যোগাযোগ ভাল ওপরের দিকে';


না আমার আর যোগাযোগ করা হইনি;-
বেসরকারি এনজিও তে কাজ করি,
পেট চালাই, বেঁচে আছি।
মাঝ বয়স পেরিয়ে     স্থুল শরীর,
মাথার মাঝখানে চুলের ঘনত্ব কমেছে;
কাঁচাপাকা দাঁড়িতে সময়ের অভাবে
কলপ করা হয়না অনেক দিন।
অর্থাভাবে স্ত্রীহীন জামা বালিশের নিচে চাপা দেই;
যে ভাবে চাপা দেই মান-অভিমান প্রবোধের নিচে।


ইউটিউবে  আর বহুদিন
মটিভেশনাল ভিডিও দেখার সময়ও হয়না।
হয়ত জীবন যেমন জেনেছি তেমন নয়,  সব সময়;-
যেমন দেখেছে এ সমাজ, এ মানু্ষ -   জীবনেরে -
তার চেয়েও আরো কিছু     বিচিত্র রকম।
অনেক রাত জেগে থাকি ফেসবুকের পাতায়;
মেসেজের পাতায় কদাচিৎ সাঁড়া পাই
                                     "কেমন আছেন?"
ঈষৎ দম নিয়ে, শ্বাস ফেলি        'সীন করি'-
নিরুত্তর থাকি,    জানি ভালো আছি বেঁচে আছি।