আজকাল আমার জীবনের
বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটে।
দিনে ঘুমাই, রাতে ঘুমাই;
প্রাণহীন জীবনের পুরস্কার।
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখি,
নীল আকাশে সাদা মেঘের পানসি ওড়ে।
ঘুমের মধ্যে কেবল মৃত মানুষেরাই জীবন্ত হয়ে ফিরে আসে।
হাসে, আনন্দ ছড়ায় ঘুণে ধরা জীবনের আয়না।
সোহরাবের মৃত শরীর কাঁধে নিয়ে
শুয়োরের মতো ছুটতে থাকি আমি;
সমস্ত শরীর ছুঁয়ে যায় সোহরাবের ক্ষতবিক্ষত শরীর থেকে
নেমে আসা রক্তস্রোতে।
ক্লান্তিতে দু পা অবশ হয়ে আসে,
মৃত এবং জীবিত জড়াজড়ি শুয়ে
থাকি রক্তাক্ত সবুজ ঘাসের বিছানায়।
ছোট ভাই মুনিরের কল্লোলিত হাসিতে চকিতে ফিরে যাই
উজ্জ্বল আলোতে উদ্ভাসিত টেনিস কোর্টের গ্যালারিতে।
নৌবাহিনীর জাহাজ বিশ খালির মেঝেতে বড় ভাই একরাম এর
পাশে দাঁড়িয়ে হাসিতে উদ্ভাসিত হই আমি এক সাহসী মুক্তিযোদ্ধা।
বাবা,মা, বিরু ভাই, মিলিবু, বন্ধু মামুন কেবলই
ফিরে আসে ড্রইং রুমের চায়ের আড্ডায়।
অফুরন্ত আনন্দে ঘুমের মধ্যে লাফিয়ে উঠি ।
ফিরে আসি জীবনে,
বর্তমান নিয়ে আসে ক্লান্তি আর
মাথার মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা।
এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি নেই ।
চোখের সামনে সাদা ছাদের দেয়ালে
ঘুরতে থাকে বাতাসের ঘূর্ণি;
চারিদিকে কেবল সাদা দেয়ালের এক নিষ্ঠুর নীরবতা।
মাথাটা জেগে থাকে, চোখের দৃষ্টিতে থাকে শূন্যতা।  
সমস্ত শরীর মৃত্যুর কাছে থাকে সমর্পিত।
বর্তমান বড় অর্থহীন, স্থবির শূন্যতায় ভরা।
মাঝে মাঝে দরজায় ছায়া-দেখি,
সাদা পোশাকে নার্স এসে
মনিটরে দেখে যায় আমার বেঁচে থাকা।
এ বেঁচে থাকার মধ্যে কোন গতি নেই,
নেই ভবিষ্যতের কোন সম্ভাবনা।
দরজার বাইরে বিশাল প্রান্তরে প্রজাপতির সাথে
খেলা করার সম্ভাবনা বাদামের খোসা হয়ে বাতাসে
উড়তে থাকে।
মাথাটাই জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে।
শূন্যতা থেকে ধীরগতিতে নেমে আসে একটা টিকটিকি,
বিষণ্ণতায় চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ;
তার দৃষ্টিতে হালকা বাতাসের মতো মৃত্যুর আমেজ।
আলোতে ভরে ওঠে চারিদিক
হালকা পায়ে পাশে দাঁড়ায় সোনালী,
হাত রাখে মাথায়।
আমি বিহ্বল স্থির দৃষ্টিতে দেখি তাকে,
তার দুচোখের বিষণ্ণতাকে।
ইচ্ছে করে দুহাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করি;
বলি, আমি এখনো বেঁচে আছি।
কল্পনায় ওর হাত ধরি,
চোখ ঝাপসা হয়ে আসে;
হয়তো কয়েক ফোঁটা জল গড়ায় দু চোখের পাশে।
সোনালী হাত দিয়ে গভীর মমতায় মুছে দেয় তা।
নার্স পাশে এসে দাঁড়ায়,
হাতে তার লাল রঙের ঔষধ ভরা সিরিঞ্জ।
ও আমাকে এখন ঘুমের পৃথিবীতে নিয়ে যাবে।
তারপর হালকা একটি নীল
আলো জ্বালিয়ে ওরা সবাই চলে যাবে।
ঘর জুড়ে নেমে আসবে হালকা
নীল সমুদ্রের কল্লোলিত সংগীত মূর্ছনা।
মস্তিষ্ক ক্রমশ হালকা হতে থাকবে,
আমার দুচোখ ভরে নেমে আসবে ঘুম আর ঘুম;
এবং তখনই জেগে উঠবে আমার শরীর।
আমি আবার ফিরে যাবো আমার জীবনে,
আমার স্মৃতিতে;
যেখানে আমি এখনো সাতরে একটি বিশাল নদী পার হতে পারি।
পারি ফিরে যেতে সেই পুরানো আড্ডায়,
যেখানে কেবল মৃতরাই জেগে থাকে আমার সাথে।
প্রাণ এখানে কেবলই নিঃশ্বাস,
শরীর এখানে কেবল মাত্র একটি খাঁচা।