অজানা সুখের লোভে


নিখিল রঞ্জন বিশ্বাস


কর্ণফ্লেক্স কী জিনিষ জানতাম ই না
জীবনে সেদিন প্রথম খেলাম দুধ চিনি দিয়ে ।
দুটো ডিম এক সাথে কখনও হয়নি খাওয়া
সেদিনই প্রথম খেলাম অফিস টেবিলে ;
চীনে মাটির প্লেটে কাটাঁ চামচ দিয়ে ।
অতখানি মাখনও বোধহয় প্রথম খেলাম
টোষ্টে লাগিয়ে লাগিয়ে ।
সসেজ,তাজা সিঙ্গাপুরী কলা,মিল্কমেড দিয়ে চা
এসব কখনও স্বপ্নে ও ভাবিনি ।
কিন্তু লটারী পাওয়ার মতো একদিন
আলাদীনের প্রদীপের মতো
পেলাম সেই সরকারী চাকরী, রাজকীয় সুখ ।


প্লেনে চড়তে হতো, জাহাজে উঠতে হতো
কখনও বোম্বে দিল্লী প্লেনে চেপে যাওয়া
কখনও কাটিয়েছি রাত জাহাজের ডেকে
কখনও কেবিনে ।
জাহাজ বন্দরে নোঙ্গর করলে
বরাদ্দ ছিল রথম্যান,ডানহিল কিংবা ট্রিপল ফাইভ ,
স্কচের বোতল ছিল তার সঙ্গে ফ্রী ।
যদিও খেতামনা এসব ,বন্ধুদের বিলিয়ে পেতাম
নান্দনিক সুখ ।
টারম্যাকে ডিউটি থাকলে
প্লেন থেকে এসে যেত খাবারের প্যাকেট
অজস্র বিস্কিট ,টফী সবাই মিলে খাওয়া হতো বেশ ।


এত সুখ,এত,সাচ্ছন্দ ,এত বিলাসী জীবন
এত ক্ষমতা এত অল্প বয়সে
বিধাতা কেন দিয়েছিল ? জানিনা ।
তবু কী এক অজানা অসুখ কুরে কুরে খেত দিনরাত
শান্তি ছিল না মনে
ভালোবাসা ছিল না জীবনে ।
ঘর বাড়ী না থাকার মতো ,
কাঁধে ছিল অনেক দায় ও দায়িত্ব ।
কুকুরের পেটে নাকি ঘী সহ্য হয় না ।
ছয় বছর চাকরী করার পর
দপ্তরের পরীক্ষা সব পাশ করে
একদিন দুম করে চাকরি দিলাম ছেড়ে .
কারণ কেউ ভুল বুঝিয়েছিল
ওখানে ভবিষ্যত নেই ।
ত্যাগপত্র জমা দিলাম
আর সারাটা জীবন কাটালাম অনুশোচনা করেই ।
সহজে  হঠাৎ কিছু পেয়ে গেলে জীবনে
আমরা  মৃল্য বুঝিনা তার ।


নিজের প্রিয় শহর ,প্রিয় মানুষ জন ছেড়ে
অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিলাম একদিন ।
জীবন দেবতা দুহাত ভরে  দিয়েছিল  সুখ ওঐশ্বর্য
রাখতে পারিনি ধরে ।
অজানা সুখের লোভে সব ছেড়ে দিয়ে
একদিন চলে গিয়েছিলাম অন্য এক গ্রহে ।