বাঙলার মাটিতে
- সরকার ফজলুল হক


নিঃশব্দে হাঁটছে কে ? কি ভাবছে সে ?
কথাও বলছে না !
এক সময় বিরবির করে বলে চলল-
ওরে তোরা ওঠ, ওঠ, আর ঘুমাইয়ো না !
দেখ পুবাকাশে আগুনের লাল শিখা  চারদিক
লালে লাল করে দিয়েছে !
হ্যাঁ তাইতো ! মাঝে মধ্যে গুলির শব্দ হচ্ছে !


তারপর কারা যেন ছুটছে গভীর রাতে
আর ফিসফিস করে বলছে পালাও পালাও
হায়েনার দল আক্রমন করেছে ! ঘর বাড়ি
জ্বালিয়ে সব ধ্বংস করে দিচ্ছে !
যাকে যেখানে পাচ্ছে গুলি করছে !
মা বোনদের আর্তচিৎকারে
সমস্ত আকাশ যেন গুমড়ে মরছে !
আহা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে ভার সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
ওরা স্বাধীনতাকে আনার জন্যে !
বৃদ্ধ বাবা-মা কাতর কন্ঠে বলছে “ বাছারা মোদের কোথা নিয়ে যাও ?
উচ্ছাস কন্ঠে শুধু শোনা গেল
'স্বাধীনতার' ডাক এসেছে !
আমরা ছুটছি, ভোর হয়ে আসছে,
সবুজের মাঠে লাল সূর্য উঠছে !
পাখির কল কাকলীতে
মনে হয় স্বাধীনতার গান ভাসছে !
কিন্তু একি ! বৃদ্ধ পিতা মাতা নিরব কেন ?
আহা ! স্বাধীনতার কথা ভাবতে ভাবতে
কখন তারা ওপাড়ে
চলে গেছে “ বাছারা” বুঝতেই পারেনি ।
শেষে নদীটির এপাড়ে বাঙলার মাটিতে
“বাছারা” চিরদিনের মত পিতা মাতাকে ঘুমিয়ে রেখে
বুকভরা বেদনা নিয়ে চলল - স্বাধীনতার পতাকা আনতে !


( পটভূমি - ১৯৭১ ইং সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে বাংলাদেশের  মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । সমগ্র দেশব্যাপি শুরু হয় নারকীয় তান্ডব,প্রানের ভয়ে এদেশের নিরিহ মানুষ ছুটে চলে একটু আশ্রয়ের জন্য ভারত অভিমুখে । অসুস্থ্য পিতামাতাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে কবিতার “বাছারা” ভারত অভিমুখে ” । রাস্তায় কখন যে তাদের পিতা-মাতা মারা গেছে তারা বলতে পারেনি । যার বিস্তারিত কবিতায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে । স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত সকল শহীদ ভাইদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেই এ কবিতা নিবেদিত হলো । )