প্রতি ইঞ্চি জমিনে একটি করে
স্মৃতিসৌধ থাকার স্বপ্ন বুকে নিয়ে
অতঃপর জন্ম নেয় বাংলাদেশ।


তারপর কোন এক রাতে
কংক্রিটের সিঁড়িতে
গড়াতে থাকে স্থপতির রক্ত ও মরদেহ।
গড়াতে থাকে বাংলাদেশ।
বদ্ধ গরাদের খাঁচায়
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গর্জনে
চাপা পড়ে মায়ের শ্রেষ্ঠ চার সন্তানের
অন্তিম হাহাকার।
দেশদ্রোহিতার দায়ভার নিয়ে
ফাঁসিকাঠে ঝোলে একজন ‘ক্রাচের কর্নেল’।
পেন্ডুলামের মত ঝুলতে থাকে
স্বপ্নের বাংলাদেশ।


তারপরও এই মাটিতে সূর্যের আলো পড়ে,
নিয়ম মেনে জোছনা খেলা করে,
রাতগুলো বাড়তে থাকে,
বাড়তে থাকে ঋণ।
বাড়তে বাড়তে জারজ বীজগুলো
পরিণত হয় মহীরুহে।


চার দশক পরে,
কিছু বিচ্ছিন্ন আওয়াজ, জ্বলে ওঠে
চেতনার ভস্মে চাপা আগুন।
অতঃপর আবার ঝলসে ওঠে ঘাতক,
মসজিদে নামাজরত ইমাম খুন হয়,
গির্জার যাজকের গলায় শান দেয় তলোয়ার,
মন্দিরে ঢাকের আওয়াজ চাপা পড়ে বোমায়,
রাস্তায় পড়ে থাকে লেখকের লাশ,
পেট্রোলে পোড়ে ঘরমুখী মানুষ।
পুড়তে থাকে বাংলাদেশ।
আর কাকচক্ষু নিয়ে আমি ও আমরা কিছুই দেখিনা।
যদিও ‘আমরা’ বলে কিছুই নেই এখন
সবটা ‘আমি’ আর মাঝে মাঝে থাকে ‘তুমি’।


কয়েক কোটি ভিতু, মৃতপ্রায় আর বিচ্ছিন্ন আত্মার
এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ভূখণ্ডে
ধর্ম কিংবা রাজনীতি কিংবা স্বার্থের কাঁটাতার বুকে
বেতাল হাঁটছে কিছু সম্মোহিত যুবক।
বেতালে হাঁটছে বাংলাদেশ।
তবু দিগন্ত রেখায়
অনাগত প্রভাতের রক্তিম আভার মত
স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।
যেমন করে ধ্বংস হওয়া জনপদ
নতুন জীবনের হাল ধরে সাইক্লোন শেষে,
যেমন করে খরতাপে চৌচির হওয়া মাঠ
সুজলা সুফলা হয়ে ওঠে কৃষকের ঘামে,
তেমনি করে এই জমাট কালচে রক্তের
স্রোত ঠেলে মাথা তোলার
সাহসী স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।
বিষাক্ত সম্মোহন ভেঙ্গে
বেতাল যুবকেরা একেকজন কাণ্ডারি হবে,
এই আশায় বুক বেঁধে
বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে
সেই কিংবদন্তীর প্রবাদ সত্য হবে,
গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ নিয়ে
আবারো মাথা তুলে দাঁড়াবে সেই জীবনদায়িনী বৃক্ষ
যার পাতায় পাতায় রক্ত রঙে লেখা থাকবে
দেশের জন্য ব্যয়িত প্রতি ফোঁটা রক্তের ঋণ।