জন্ম লগ্নে ঊষাকালে
লেখা হয়নি মনুষ্য ভালে
বাঁধা পড়েনি জাতির জালে ,
জাতি শূন্য ছিল সকলে ;
নর রক্ত সমান ছিল ,
তবে কেন জাতি হল !
জাতির ভেদ কে করিল !
জাতিতে জাতি ভরে গেল ?
মানুষ রূপে মানুষ হয় -
মনুষ কেন জাতির কয় !
মানুষ কখন দুষ্ট মনে
বিভেদ আনে জনে জনে ,
ধরায় মানব এসেছে যবে -
একক ছিল মনুষ সবে ,
বাঁচার তাগিদে মিলে মিশে
সবাই ছিল সবার পাশে ৷


বিধান পুথিতে, বকছে শ্লোক -
জাতির জন্ম ! সেই পরলোক -
জাতির উদ্ধার ভুগে দুর্ভোগ !
উত্থান জাতে -কাটিয়ে দুর্যোগ !
বিচার যখন এলোমেলো
মানব জীবনে গ্রহণ এলো ,
সমাজের বুকে ঘুণ ধরিল -
অগ্রগতি বাধায় ভরিল ৷


কঠোর নিয়ম করতে যেয়ে
ভোলা মানুষ তখন পেয়ে ,
জাতি স্রষ্টার তাপ-শোক -
ছিল না কোন আপসোস !
স্বার্থ ছিল অতি ভয়ানক ৷
জাতি না কি হতেই হবে
জাতির বিনা ধর্ম কবে ?
অধর্মে সব ভরে যাবে -
জাত্য ধর্মে ধরণী রবে -
বিভিন্ন জাতি হলেই তবে !
মিলে মিশে থাকিলে সবে ,
অটুট শান্তি আসিবে ভবে !
‘চতুর্বর্ণ ময়া সৃষ্টং
গুণঃ কর্ম বিভাগশ’,
গীতার উপদেশ
পায় পরিবেশ
শুভ সন্দেশ
এ যেন, দেব আদেশ !


জাতি পেল বল, বিপুল আখ্যা
শিরঃচ্ছেদ হল সমস্ত ব্যাখ্যা ,
পেল যুক্তি পেল খ্যাতি
আবদ্ধ বন্ধনে জাতির মতি ।
সীল মেরে হল, নীচ পতিত -
সমাজের কাজ যতো
হবে না জাতি ব্যাতীত !


সেখান থেকে জাতি-পাতি
মানব হল মন্দ গতি -
বিভেদকারী উঠল মাতি -
জাতি শাস্ত্র দর্শন নীতি -
আচারে আনে ঘোর কুমতি ,
সৃষ্টি হল সহস্র জাতি !


উঁচ-নীচ ছোট বড়ো -
স্বার্থ সাধক হয়ে জড়ো -
ভিত যদিও নড়-বড় -
জাতি চক্র ঘড়-ঘড়-
চালাচ্ছে ধারা অবিরাম !
জাতি থামানোর নেইকো নাম ৷
বড়ো জাতির বড়ো সুনাম -
স্বার্থ সিদ্ধির এটাই কাম -
ধরে রেখেছে জাতির দাম !


জাতির অসহ্য দংশ -
বয়ে চলে ধারা বংশ -
নীচুরা আবহমান কাল ধরে ,
পারিবেনা উঠিতে উপরে !
কী নিদারুণ ! উতপ্ত আগুন !
সমাজের বুকে জ্বলে -
সারাটা জীবন, দগ্ধ করিছে ,
ধিকি- ধিকি তুষানলে !


অনলে দহিলে দেহমন জ্বলে -
ছুত-অছুতের জ্বালা !
বুঝিবে সে কিসে -
না বোঝে, না মিশে -
গলায় পরিনি সে ,
জাতি বন্ধনের মালা !
বিষ সম গেলে -
তীব্র জ্বালা ভরে গলে -
যায় না কখনো ফেলা !
আরো কিছু আছে মেলা-
ফেলিতে গেলে মহা ঝামেলা ৷


জাতির বাঁধা, রয়েছে অজুত -
কেউ হরিজন- কেউ ছোঁয়াছুত -
কেউ বা শূদ্র নমঃ ,
সকলে দলিত সম ৷
ঘটি-বাটি-উঠান-তুলসী-
নল-জল-কল, ঘাট কলসী,
সমাজ যেন সজাগ চোখে -
গা বাঁচিয়ে চলে ,
একে অপরের ছোঁয়া লাগিলে ,
শুদ্ধিবে নেয়ে গঙ্গাজলে ৷
বনে-জঙ্গলে ,নীল গগন তলে ,
পাহাড়ে, বিহোড়ে-
হাটে-মাঠে-ঘাটে -
ধর্মে পূজা-পাঠে -
সভা মণ্ডপে ,
কত যে জাতির বাস ;
খাটছে তারা, বারটি মাস ,
তারাই মেটায় চাহিদার আশ ৷


কেউ কামার কেউ কুমার -
কেউ চন্ডাল  কেউ ডোম ,
কেউ মুচি ,কেউ অশুচি -
কেউ ছুতার, কেউ মেথর ,
কেউ কাঠুরে, কেউ মেছুরে ,
ছোট ক্ষৈত্র - অতি ক্ষুদ্র -
জাতিতে নিম্ন স্থান -
মানবতা হয় ম্লান !
জাতিতে এরা রয় অস্পৃশ্য -
সবারে যোগায় খাদ্যশস্য -
কত মানব বাধা ঠেলে ,
কর্মজীবন, জাতির চলে ৷


জাত্যাভিমান হয় যে মহান -
স্পর্শ কাতর কালে-
মানুষ ম’লে, বিবাহ স্থলে ,
পূজা-পার্বণ ছলে -
মিথ্যা চাল চালে !
সুযোগ সন্ধানী সুযোগ খোঁজে ,
জাতি বর্ণের ভাঁজে ভাঁজে-
তখন থাকে তাড়া -
বড়ো জাতির বড়োপ্পনে ,
নীচু জাতি অছুত মেনে -
আঁতে দেয় তার নাড়া !


যা’তি যা’তি যায় না জাতি !
জাতির যেন ঊর্ধ্ব গতি ।
কারা যে ধরে এসব কুমতি ?
আসুক ফিরে সবার সুমতি় ৷
বর্ণ জাতি সমাজের কুড় -
করতে হবে অদূরে দূর ,
ফন্দি ফিকির, কারসাজি -
মানুষ মানতে নয় রাজি ৷
রুখতে কভু হবেই হবে
জাতির মুক্তি পাবে তবে ,
জাতির যুক্তির আধার নাই -
অদূরে জাতিশূন্য হবে তাই ৷
শাসক ভূমিকা আদর্শ হলে -
উপায় হবে অতি সকালে ,
সুষ্ঠু শিক্ষা, সত্য জ্ঞান-
বর্ণ পাবে পরিত্রাণ ,
মিথ্যা সব বর্ণ ভাগ-
জাত্যাভিমান করিবে ত্যাগ ৷
(ইং১০-০৯-২০১৫-বৃহস্পতিবার)আমার অন্য কবিতা দেথুন গুগল (Jiggasa.in)