হঠাৎই অনুভব করলাম ওরা আমার হাত পা গুলো
শক্ত করে বেঁধে রেখেছে লোহার খাটটার সাথে।
উফ্ কি যন্ত্রণা, তবুও একটু নড়ার উপায় নেই,
কেন যেন মনে হচ্ছে একটা কালো ছায়া আমার
দিকে এগিয়ে আসছে। আমার শরীর থেকে
সব রক্ত শুষে বিষাক্ত তরল ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কেন ওরা আমায় নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে?
আমার শক্তি যা ছিল সব একটু একটু করে
শেষ করে দিচ্ছে ওরা। কানের গোড়ায় শুধু
টিক টিক টিং টিক টিক টিং শব্দটা জোড়ালো হচ্ছে।
আমি তো চোখ খুলে কিছু দেখতে পাচ্ছি না
শুধু ভেসে উঠছে মা এর মলিন মুখ,
একটা সবুজ পৃথিবীর করুণ মানচিত্র
আর থমথমে নিঃসঙ্গ অন্ধকারের নিস্তব্দতা।
আমাকে তোমরা শুইয়ে রেখো না, আমাকে যেতে হবে
ঐ চির সবুজ পৃথিবীর বুকে মানুষের মাঝে।
যেখানে আমার চোখের জলে সৃষ্টি হবে
শিশুর আগামী দিনের সুন্দর রঙিন স্বপ্ন।
আমি যে ওদের প্রকৃত মানুষ করার কারিগরের
দ্বায়িত্ব নিয়েছি, আমাকে ছেড়ে দাও আমায় যেতে দাও।
এই ভাবে হিমশীতল ঠাণ্ডা ঘরে বেঁধে রেখো না আমায়,
আমাকে যেতে দাও আমার প্রিয়তমার কাছে,
আমার একমাত্র তনয়ার কাছে ও যে আমার জন্যে
বসে আছে অশ্রু সিক্ত আধ ঘুমন্ত চোখে।
আমি বুঝতে পারছি আমার গাল বেয়ে
গড়িয়ে পড়ছে অবুঝ নোনা জলের ধারা,
শিথিল হয়ে আসছে আমার হাত পা,
কেন এমন শক্তি হারা হয়ে পড়ছি? তোমরা কেন
কিছু করছ না? আমার সমস্ত অঙ্গ কেন বিকল হয়ে যাচ্ছে?
কেন আমার বুকে পাহাড় প্রমাণ চাপ চাপিয়ে দিয়েছো?
কেন আমার নিঃশ্বাসে এতো জ্বালা?
কেন আমার সব অতীত মৃয়মান হয়ে যাচ্ছে?
তবে কি আমার মস্তিষ্ক আর কাজ করছে না?
তোমরা কিছু করো, কেন আমায় ফেলে রেখে
তোমরা সবাই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছো?
আমি দেখতে পাচ্ছি এক ঝাঁক সাদা পোশাকী
তোমার দিকে এগিয়ে আসছে। ওরা বলছে ওদের সঙ্গে যেতে।
তোমরা তো আর আমায় রাখলে না তাই যেতেই হবে,
কিন্তু আমি যে চাই তোমাদের সাথে থাকতে
আমার মায়ের সাথে থাকতে, এর কি কোন উপায় নেই?
তোমরা কি এমনই অসহায়?
আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছ সৃষ্টির আদি সূচনায়।
তোমরাও পারো বটে এতক্ষণ আমার শরীর থেকে
সিরিঞ্জ দিয়ে বোতল বোতল রক্ত তুলে নিয়ে
এখন নির্বিকারে সাদা ফুলের মালা পড়িয়ে দিচ্ছ!
তবে মনে রেখো আমার এই শেষ দিন টা
স্মৃতি হয়ে থাকবে তোমাদের কাছে।।