একটু সুখ বিনিময়ে কাঙ্গালের মতো মানবিক কোনো এক জলসায়
এক দন্ডের জন্য একান্তেই পেলাম তাকে যখন
চোখে তার এক ফোটা জল চিক চিক করে আমাকে জানিয়ে দিলো
গভীর দুঃখের ইতিহাস-
সেই জলের ভেতরে আমি দেখেছি আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া
টাইটানিক জাহাজ।


ইচ্ছে  করেছিলো তাকে বলি-
‘ঐ এক ফোটা অশ্রু-কনায়
এতো জল কোথায় পেলে তুমি  
তুমি কি জল-বালিকা নাকি সাগর-দেবী’?
ঐ এক ফোটা জলে নূহের প্লাবন কেনো আছড়ে পড়ে জুদি পর্বতের চুড়ায়
ঐ এক ফোটা জলে উনসত্তুরের মহা জলোচ্ছাসের নৃত্যপাগল জলরাশী
যেনো ফনা তোলে;
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, চুয়াত্তরের- অস্টাশির বন্যা--
কেবল বন্যা আর বন্যা-জল আর জল- কল কল ছল ছল ছলাৎ ছলাৎ
সংসার ভাঙার বন্যা, ঘর ভাঙার বন্যা,
মানুষ পশু আর ফসল ভাসানোর উন্মাদিনী জলোচ্ছাস---


তোমার চোখের জলে-দেখেছি একাত্তরের মুক্তি যুদ্ধে
শহীদ ভাই বোনদের মা বাবার চোখের লোনা জলের ধারা,
দেখেছি গ্রাম থেকে শহরে আসা নিঃস্ব পরিবারের বালিকাদের
সম্ভ্রম বিকিয়ে জীবন-সংসার চালানোর কঠিন কষাঘাতে জর্জরিত চেহারা
তাদের মা বাবার চোখের উষ্ণ অশ্রু-ধারা; এটাইতো আমার
গ্রামবাংলার হত-দরিদ্র লাঞ্ছিত চেহারা!


এক দন্ডেই দেখেছি সব ঐ এক ফোটা চিক চিক জলের গভীরে
তার চোখের ঐ এক ফোটা জল
জানিয়ে দিলো বাংলার দরিদ্র মানুষের যন্ত্রণার কষ্টের রুগ্ন ইতিহাস
বনলতা সেনের রোমান্টিক চোখ আমি দেখিনা
সখিনা ফাতেমার চেহারায় দেখি রুগ্ন বাংলা;
আমার প্রিয় ভক্ত আমায় ক্ষমা করো-
তোমাদের জন্য আমি পারবোনা রোমান্টিক কবিতা লিখতে


মঙ্গায় দুষিত আমার প্রেম
বন্যায় উদ্বাস্তু আমার ভালোবাসা
সন্ত্রাসে আতঙ্কিত আমার প্রেয়সী
দুষ্ট নেতাদের ছলনায় অপহৃত আমার প্রিয়জন
ষড়যন্ত্র আর অসুস্থ রাজনীতির বৈরী ঝড়ো হাওয়ায়
বিদ্ধস্ত আমার মায়ের চেহারা,
আমায় রোমান্টিক কবিতা লিখতে বলোনা বন্ধু
জল-বালিকার চোখের এক ফোটা জলে আমি দেখেছি
এক মায়ের কঙ্কাল!


(৩০ জুন ২০১২, বো রোড, লন্ডন। কবিতাটি আমার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ "জলবালিকা" তে প্রকাশিতব্য। আগামী একুশে বইমেলায় প্রকাশ করবে "ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ"।