ছিনু তোমাদেরি মাঝে--
            আজি যেতেছি চলিয়া ;
ব্যথাতুর মনে এ সাঁঝে
             যাইগো কিছু বলিয়া ।
সময় তবে কিছুটা দিও
             তাকায়ে আমার পানে ।
পারোতো স্মরণ করিও
             অবজ্ঞায় বা অপমানে ।
জানিনে কিসের তরে,
                 সাধিতে কর্ম কিবা--
আসিনু এ ধরণী ’পরে,
                 পেনু প্রাণের বিভা ।
দিয়েছো আনন্দ দুখ
                ঘৃণা খ্যাতি ও সম্মান ;
কখনো ভাঙিলে বুক,
                কখনো বা মাল্যদান ।
যা কিছু আমার র’বে--
                সকলি ভুলিবে জানি ;
চোখের আড়াল হবে
                 আমার এ চিহ্ণখানি ।
ভুলিও আমার হাসি
                নবীন হাসিটির ভীড়ে ।
লেখা মোর হলে বাসি--
                পাতাগুলি দিও ছিঁড়ে ।
আমার এ গানের মালা
                ছুঁড়িয়া ফেলিও দুরে ;
না, বহিও না সে জ্বালা
              সুখী প্রাণের অন্তঃপুরে ।
কয়ে গেনু প্রলাপ যত--
              অতশত রেখোনা মনে ;
মূল্য তারি আছে কত,
             হিসেব করো না জীবনে ।
ভাসে যদি ভাসুক না
            নীর মোর নয়নের তীরে ;
হাসে যদি হাসুক না
             কেহ উপহাসে গভীরে ।
মোর আজির এই বাসা
             শূণ্য থাকে তো থাকুক ;
আগাছাতে হোক ঠাসা--
             না কেহ মনেতে রাখুক ।
যে ফুল ফোটে প্রাতে--
            ঝরিয়া যাবে সে সন্ধ্যায় ;
কি আর সে লয় সাথে--
            আাসে কি স্মৃতিচারণায় ?
তবুও যাওয়ার আগে
            দু’চারখানি কথা তো কই--
অন্তরে সদাই জাগে,
            ফিরিয়া হেথা আসিবোই ।
সকলি হেথা রমনীয়--
            যা কিছু দিয়েছো সবাই ;
সকলি মোর স্মরণীয়--
           জীবন শেখালো যে তাই ।
ঘৃণা করে কিছু লোক,
             কিছু তো ভালোবাসে ;
প্রাণ তায় করে শোক,
             আবারও খুলিয়া হাসে ।
আবার আসিলে ফিরিয়া
             তোমাদের প্রিয় ডাকে--
এমনি আমাকে ঘিরিয়া
             জীবন পূর্ণ যেন থাকে ।
কত কথা ভাসে মনে
             কত শত আছে স্মৃতি--
বাজে বিদায়ের ক্ষণে
             কিছু অভিমানী গীতি ।
তোমার অন্তরে যদি
             করিছে বিমূঢ়তা ভীড়--
জেনো--জীবন অবধি
            জেনেছি, সুন্দর এ নীড় ।