ছোট্ট একটা ছেলে, দাঁড়ালে ঘরের দোরের পাশে ;
মুখটা বড়ই চেনা চেনা--চোখের আড়ালে হাসে ।
পরেছে ঢিলে প্যান্ট, দড়ি-বাঁধা; গেঞ্জি ঢিলে আরো ।
হাতটি দিয়ে গালে, শুধালে--চিনতে আমায় পারো ?
চিনতে পারলেম না। শুধালেম--কোথায় তুমি থাকো ?
ঐ যে যেথায় খালের ওপর সরু নড়বড়ে সেই সাঁকো,
ওই তো--সোজা পূবের পাড়ায় চণ্ডিতলার পাশ ঘেঁষে ;
সব দেখছি ভুলেই গেছো--বললে খোকা মিষ্টি হেসে ।
কেলাব, দীঘি, মসজিদ, চক্কোত্তিদের অ্যাত্তোবড় দালান--
সেসব পেরিয়ে কলু-বাড়ির পরেই তো মাটির ঘরখান ।
দীঘির পাড়ে তালের গাছ, পাতায় ঝোলে বাবুই-বাসা ;
জষ্ঠি মাসে কত্ত কত্ত কাঁদি--থাকে হাজার তালে ঠাসা ।
জলের মাঝে লাল শালুকের বনে ডাহুক পাখি ডাকে ;
দেখলে মানুষ--পানকৌড়ি কোথায় যে লুকিয়ে থাকে !
উদোম হয়ে সাঁতার কাটি খুব—গরম কালের ভরদুপুরে ;
দল বেঁধে সব হট্টগোলে যাই--ঘাট ছেড়ে সে-ই দুরে ।
বিনা নুনেই খুব চিবোই কুড়িয়ে আনা কাঁচা আমের গুটি--
তখন তো গরম কালে চলে মোদের পেরাইমারী-তে ছুটি ।
ডোবা-য় কোমর সমান পাঁক ঘেঁটে, খুঁজি পাঁকাল কই ;
"আয়রে গোলু, চান করবি"-মা ডাকতে থাকে পইপই ।
ভরা বর্ষায় নৌকা ভাসাই, বানাই খবর কাগজ কেটে ।
সাঁঝবেলাতে পড়তে বসি, অঙ্ক কষি খড়ি দিয়ে শ্লেটে ।
বঁড়শি ফেলে মাছ ধরতে যাই দুরে, ডোবা ঝিলের জলে--
নান্টু, বিলু, খোকন, ওসমানেরা সবাই থাকি এক দলে ।
জলফড়িং-এর ল্যাজ টি কেটে দিয়ে--তাতেই পুরি ঘাস ;
ছোটকা দেখে কান মলে দ্যান্, কন্--তুই ব্যাটা বদমাস ।
হ্যাজাক-জ্বালা আলোয় গাঁয়ে সারারাত যাত্রা হল কাল ;
কি ভয়ানক লড়াই হল যে ! ফিরেছি চক্ষু করে লাল ।
সাজলো বাবা নবাব সিরাজ, হুসেন কাকা লুৎফা বেগম ;
মোহনলাল সেজে কানাই জ্যাঠা করল লড়াই কি বেদম !
জানো তো--কাল দুপুরে বাটবে মা বড়ির বিরি ডাল ;
মাদুর পেতে কাছেই বসে বলবো--দিও না বেশি ঝাল ।
আরে হাঁ করে সব শুনছো কি-- বুঝলে তো, আমি কে ?
প্রশ্নটা করেই পালিয়ে গেল সে, যেন হাওয়াতে ছুট দে’ ।
অমনি আমার ঘুম ভেঙে যায় শীতের এই ছোট্ট বিকেলে ।
ধড়পড়িয়ে উঠে বসি; ভাবতে থাকি, কি দিন এলেম ফেলে !
ঘুমের মধ্যে এল যে—ওরে, সে তো ছোট্টবেলার আমি ।
দু’কুড়ি দশ বয়স হল; ভাবছি, স্মৃতি কতই মিঠে এবং দামী !