একদিন রাতে আমি ভালো এক স্বপ্ন দেখিনু--
“উঠে দ্যাখ, উঠে দ্যাখ," বলে যেন চিনু ।
উঠে দেখি--কিলবিল কিলবিল রাস্তার ’পরে ;
ভাবি--কে ওরা কে ওরা, কোথা যায় ভিড় করে ?
লোক নয় পশু নয়, নয় যত গাড়ি সারি সারি;
তবে ওরা কারা রে, হোথা এত কেন মারামারি ?
ঠেলাঠেলি এত ভিড়--কোথা যায় একদিকে ?
ভেবে ভেবে ঘামি শুধু, হল বুঝি ঘিলু ফিকে ।
ঘরে ছিল দুরবীন, চোখে দিয়ে দেখি যেই--
চোখ হল ছানাবড়া, মুখে মোর ভাষা নেই ।
চিনু বলে-- হল কি, দেখি দেখি, দুরবীন দাও।
বসে পড়ে ধপ করে । বলে--হে ঠাকুর, বাঁচাও।
ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়ি, বলি-- হায় হায় বাবা রে,
ভয়ঙ্কর ভাইরাস এবারে বসাবে কি থাবা রে !
ঘষে ঘষে হাত ধুই গুনেগুনে দিনেরাতে বারোবার,
মাস্ক কিনে ট্যাঁক ফাঁকা--কোথা পাই টাকা ধার ?
পরিবার কাঁদে হায়, বুঝি ডুবে ঐ যায় রে--
রেশনের মোটা চাল, পেলে শুধু খায় রে ।
দু’জনেই কেঁদে কেঁদে চোখগুলো করি লাল;
কে যে কারে দেখি রে--ভাগ্যকে পাড়ি গাল ।
কি জানি কেন, ফিরে দুরে দুরবীন দিয়ে দেখি--
হল সব পষ্ট । বুঝে গেনু, দু’জনেই বুদ্ধির ঢেঁকি !
ডেকে বলি চিনুকে--কাঁদা ছাড়, মোছ নাকে সদ্দি ;
দেখে বল দুরবীনে আগেভাগে যান কে রাস্তার মধ্যি ?
চিনু দ্যাখে ঘুরে ফিরে--শত ভাঁজ কুঞ্চিত কপালে ;
ঘনঘন নাড়ে মাথা, ফেঁসে গেছে বড় চিন্তার জালে ।
আমি বলি মজা করে, তুই বুঝি হলি আজ হাঁদু ;
ভালো করে দ্যাখ, হেঁটে যান আগে বিজ্ঞানী দাদু ।
ঐ শোন বাজে বাঁশি, ননস্টপ জাদুসুরে ভাই রে--
ওই সুরে ভাইরাস যাবে সব দেশ ছেড়ে বাইরে ।
চেয়ে থাকে ফ্যাল ফ্যাল চিনু ।বলে, বড় হল জ্বালা;
ঢোকে না মাথায় কিছু—ওরে, ফ্যানখানা জোরে চালা ।
আমি বলি--ভালো করে শুনে রাখ্, মাথা তোর খাটা;
ঠিকঠাক বুঝে গেলে গায়ে তোর দেবে ঠিক কাঁটা ।
বল দেখি, কোথা যান দাদু তার বাঁশিখান বাজায়ে ?
বলি শোন্, খান দুই দীঘি তিনি রেখেছেন সাজায়ে ;
ভরা তায় টলটল--অ্যালকোল আর সাবানের জল,
সেই পথে যান দাদু, পিছে পিছে যত ভাইরাস দল ।
তারপর ‘ঝুপঝাপ’ ‘আহা’ ‘উহু’, হবে শোরগোল ;
বিজ্ঞান বলে--ঐ জলে গুলে যাবে লিপিডের খোল ।
শরীরের ঐ খোলে ভাইরাসের রয় যত কেরামতি--
আজ তাই কোবিড-এর কপালে আছে বড় দুর্গতি ।
বাজানো বড় কঠিন হে, হ্যামলিন সাহেবের বাঁশিটি ;
বাজান দাদু অনায়াসে--মুখে তাঁর অমায়িক হাসিটি ।
সব শুনে চিনু বলে, দাদুর জ্ঞান সাগরের মত রে !
ঘুম থেকে উঠে ভাবি—ওরে, যদি এমনটাই হত রে ।
১৫.০৪.২০২০