মনোলীনা,
অনেকদিন হলো দিনশেষে বাড়ি ফিরতে গেলে প্রায়ই হারিয়ে যাই,
কোনমতেই মনে করতে পারিনা আমার
বাড়ির ঠিকানা।
একে ওকে ডেকে জানতে চাই,
‘আমার বাড়ির ঠিকানটা কি বলতে পারবেন?’
এমনও দিন যায় কখনো কখনো বাড়ি ফিরতেই ‌অনেকদিন লেগে যায়।


ঘর থেকে বের হবার সময় প্রতিবারই কাগজে ঠিকানা লিখে রেখে দেই বুক পকেটে,
তবুও কীভাবে যেন তাও হারিয়ে যায় সবসময়!
মাঝে মাঝে ট্রাফিক সিগন্যালের লাল হলুদ আর সবুজ আলোর নীচে বসে থাকি সারারাত,
যদি রাস্তায় পরিচিত কেউ দয়া করে বাড়িতে পৌছে দেয়।


মনোলীনা,
যদি কখনো কোনো ভিখারির কাছে আমার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে সে ও দার্শনিকের মতো সময় নিয়ে চিন্তা করে বলে,
‘বাড়ি কি জিনিস আমি বলতে পারব না,
তবে প্রতিটি মানুষের একটা ঘর আছে,
যে যখন যেখানে থাকে সেটাই তার ঘর।’


রাস্তার পুলিশদের কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে বলে,
‘আপনাকে কিন্তু আমরা চিনে ফেলেছি,
বুকের ভিতর এমন ভয়ংকর অভিমান নিয়ে ঘুরে ঘুরে শহরের মানুষকে অযথাই আতঙ্কে রাখছেন,
একদিন দেখবেন ফিফটি ফোর ধারার মামলা দিয়ে দিবো।’


আর কোনো কবির কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে সে শুধু একটি জোনাকি পোকা বুক থেকে বের করে দিয়ে বলে,
‘বাড়ি গিয়ে কী হবে,
এর পিছনে পিছনে বাকি জীবন চলতে থাকুন,
একদিন একটা কবিতা পেয়েও যেতে পারেন।’


মনোলীনা,
তারপর একদিন বস্তাবন্দি করে রাস্তায় ফেলে যাওয়া এক বিড়ালের কাছে শিখলাম গন্ধ শুঁকে শুঁকে বাড়ি ফেরার নিয়ম।
বোকার মতো বারবার হারিয়ে যাচ্ছিলাম,
অথচ গন্ধ শুঁকে শুঁকে বাড়ি ফেরা কতোটা সহজ!


এখন হারিয়ে গেলে প্রতিবারই বাতাসে বড় একটা নিঃশ্বাস নিই,
তোমার শরীরের গন্ধ যতক্ষণ না পর্যন্ত নাকে ভেসে আসে- একজায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি,
তারপর যখনই টের পাই বাতাসে তোমার শরীরের গন্ধ
সেই দিকেই হাঁটা শুরু করি।


প্রতিবারই ঘুরে ফিরে একই বাড়ির গেটে চলে আসি,
দারোয়ান জানতে চায়, 'কাকে চাই?'
অভিমান বুকে আমি একবারও বলতে পারিনা
-মনোলীনাকে চাই,
তবুও আমি জানি তুমি এ বাড়িতে‌ই থাকো।


মনোলীনা,
তোমার শরীরের গন্ধ চিনে বাড়ি ফেরার এ রীতি খুব সহজ,
কিন্তু খুবই লজ্জার ব্যাপার।
আমি জানি আমার আর নিজস্ব কোনো ঘরে ফেরা হবেনা কখনোই এই এক জীবনে,
ঠিক রাস্তার বিড়ালটার মতোই।


আজকাল দূর থেকে অনেকক্ষণ তোমার বাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে থাকি,
তারপর আবার বস্তাবন্দি বিড়ালটার মতোই আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াই এক ভয়ংকর অহংকারী অভিমান বুকে নিয়ে।


বুক পকেটে রাখা বাড়ির ঠিকানাটা কখন যে টুকরো টুকরো করে আমিই ছিঁড়ে ফেলি,
টেরও পাইনা!


হাঁটতে হাঁটতে আবারও নতুন  কোনো রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াই,
সেই বিড়ালটাও আমার পাশে ছায়ার মতোই থাকে সবসময়,
কেউ দেখেনা শুধু আমিই দেখি তাকে!


মনোলীনা,
সামনে যাকে পা‌ই তাকে‌ই ডেকে বলি,
‘আমার বাড়ির ঠিকানটা কি বলতে পারবেন?’
———————————
রশিদ হারুন
২১/০৮/২০২০