আমি তাদেরই দলে
যাদের জীবন যায় এক দীর্ঘ ‌অচেনা প্রতীক্ষায়।
কাউকে দেখতে ইচ্ছে করলেই দিন বা রাতের হিসাব না করেই সাথে সাথে রওনা দেই তার কাছে।
মানুষটিকে বাড়িতে না পেলেও তার বাড়ির নীচেই
দিনকে দিন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তার জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষা করি।
দীর্ঘ প্রতীক্ষায় আমার কোনো অবসাদ জাগেনা শরীরে কিংবা মনে,
অথচ তাদের সাথে দেখা হলে তারা বারবার ঘড়ি দেখে।
আমার সময় জ্ঞানের অভাব দেখে তারা খুবই ‌অস্বস্তি অনুভব করে!
একসময় তীব্র ছটফট শুরু করে আমাকে বিদায় করে দেবার জন্য।
আবার যাবার সময় ভুল করে সেই মানুষটি যদি কখনো বলে যায়
-‘আবার দেখা হবে’
তাহলে আমি সেখানে‌ই দাঁড়িয়ে তার প্রতীক্ষা করি আরেকবার দেখা না হওয়া অবধি।
এই তীব্র প্রতীক্ষার এক অদ্ভুত নেশা আছে আমার শরীর-মনে।
এ যেনো প্রাচীন হাহাকারের নেশা,
এ যেনো প্রাচীন একাকীত্বের নেশা।
আমার বাল্যকালের এক বন্ধু আমাকে এই নেশা ধরিয়ে দিয়ে গেছে।
এই শহর ছেড়ে চলে যাবার সময় তাকে বাসে তুলে বিদায় দিতেই;
সেই কবে সে বাসের জানালা দিয়ে চিৎকার করে হাহাকার কন্ঠে বলেছিলো,
“ আসিরে, আবার দেখা হবে!”
তারপর থেকে আমার বুকে ইচ্ছে জাগলেই অনন্ত সময় ধরে বাস স্টপে দাঁড়িয়ে থাকি তার প্রতীক্ষায়,
যদি আবার সে ফিরে আসে কোনো একদিন।
ফিরে এসে যদি আমাকে না দেখে এই বাসস্টপে,
তাহলে সে বড় কষ্ট পাবে।
তার এই কষ্টের কথা ভাবলেই আমার মন খারাপ হয়ে যায় যখন তখন।
শুধু এই জন্যই আমি বাসস্টপে তার প্রতীক্ষায দাঁড়িয়ে থাকি দিনকে দিন।
বাসস্টপে মানুষগুলো আমাকে দেখে বোধহয় ভাবে আমিও তাদেরই মত বাসের অপেক্ষায় একজন যাত্রী,
অথচ কোনো বাসের হেলপার কখনোই আমাকে একবারও ডাকেনা বাসে ওঠার জন্য।
বাসের হেলপাররা ঠিকই চিনে ফেলে আমাকে,
তারা ঠিকই জানে আমি মানব জীবনের দার্ঘ প্রতীক্ষার এক হাহাকারের ফসিল।
আসলে আমার মতো ‌অনেক মানুষই পৃথিবীর বিভিন্ন বাসস্টপে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে,
কারো না কারো জন্য ।
‌এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মানুষটি একদিন দীর্ঘ প্রতীক্ষার এক হাহাকারের ফসিল হয়ে যায়।
সেই মানুষটি কিন্তু কখনো টেরও পায়না সে আর মানুষ নেই,
সে এখন দীর্ঘ প্রতীক্ষার এক হাহাকারের ফসিল।
———————————
র শি দ  হা রু ন
১৫/১০/২০২০