বুক পর্যন্ত সমুদ্রের জলে দাঁড়িয়ে
ডুব দিতে যাবো যাবো ভাবতেই
বুকের বরাবর ভেসে এল একটি ছোট্ট কাঠের টুকরা।
হাত দিয়ে তুলতেই নোনা জলে অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া
খোদাই করা একটি লেখা চোখে পড়ল
“ভালো থেকো”।
আমার আর সমুদ্রের জলে ডুব দেওয়া হলো না।
সাথে সাথেই প্রচণ্ড রকম বিষাদ আমাকে ডুবিয়ে দিলো
সেই কাঠের টুকরাটি নিয়ে আমি জল থেকে উঠে
সমুদ্রের পারেই শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।


কে কাকে ভালো থাকতে বলেছে?
কোন মানুষটা বিদায় নিলো তার আপনজনের কাছ থেকে?
আহারে, তারা দুজনেই কি ভালো আছে?
তাদের কথা ভাবতেই হুহু করে  কেঁদে উঠলো আমার মন।


আপনজন ছাড়া কেউ কি ভালো থাকে?
আমি ভালো নেই।


মনোলীনা,
শেষবার দেখা করার সময় তুমি বলেছিলে,
“ভালো থেকো”
আমি সেদিন কোনো কথাই বলিনি,
তোমার জন্য  রিকশা ডেকে দিয়েছিলাম।
তারপর রিকশাওয়ালাকে অস্বাভাবিক উচ্চ স্বরে বলেছিলাম,
“হুড ফেলে দিন,
আস্তে আস্তে চালাবেন,
বেশি ঝাকি যেন না লাগে,
আর সাবধানে যাবেন।”


রিকশার হুডে মাথা গলিয়ে তোমার দিকে না তাকিয়েই
নিচু স্বরে বলেছিলাম,
“আমার ঘরের চাবিটা কষ্ট করে
তোমাকে ফিরিয়ে দিতে আসতে হবেনা,
আমার কাছে অতিরিক্ত চাবি আছে।”


আমার মুখের চামড়া তখন একটুও কুঁচকে যেতে দেইনি
কোন কষ্ট, বেদনা আর হাহাকারে।
এক ফোঁটা জলও ঝরে পড়তে দেইনি
রিকশায় বসা তোমার পায়ের উপর।


সমুদ্রের জল থেকে কুড়িয়ে পাওয়া কাঠের টুকরাটা
আমাকে আজ সমুদ্রের জলে ডুবতে দিলো না!
আমি এখনো সেই পুরোনো তালাটাই লাগাই দরজায়,
খুব যত্ন করি তালাটার।
ভালো থাকতে বললেই
আমার মতো ‌অনেকেই ভালো থাকে না আর কোনোদিন।


সমুদ্রের কাছে আসলেই আমি টের পাই
আমার মন হুহু করে কাঁদে আমার নিজেরই জন্য।


মনোলীনা,
আমার বুকের সমুদ্রের কাছে এ সমুদ্র বিন্দু মাত্র,
আমি আজও ভালো নেই তোমাকে ছাড়া।
—————-
র শি দ  হা রু ন
২৮/০৭/২০২২
মাফুসি আইল্যান্ড
মালদ্বীপ।