আজকাল সারারাত বিছানায় পুড়ে আমার মধ্যবিত্ত মুখোশ,
সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরময়।


অমাবশ্যার রাতেও সেই মুখোশের আগুন
আহত জোনাকি পোকার মতো জ্বলে আর নিভে
আমার মধ্যবিত্ত দরজা জানালায়।


আমি আতঙ্কিত
আমি প্রচণ্ড আতঙ্কিত;
আরেকটু সময় পেলে এই মুখোশের আগুনে না জানি
পুড়ে যায় পুরো শহর।


সূর্য উঠার পর থেকেই একটু একটু করে অক্ষমতার আগুন লাগতে থাকে আমার মধ্যবিত্ত মুখোশে।


প্রতিদিনই নতুন নতুন অক্ষমতার জ্বালায় মুখোশ ঝলসাতে থাকে।
যখন তখন বাড়ি ভাড়া লাফ দিয়ে হাতের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার দুশ্চিন্তার আগুনে মাথা পুড়ে।


খরচের ঘোড়া শুধু দৌড়ায় আর দৌড়ায়।
সংসারের খাবারের খরচ,
সন্তানের শিক্ষার খরচ,
বাবা-মার ওষুধের খরচ।
চিকিৎসার খরচ বাঁচাতে নিজেরই শরীরের অসুখ লুকানোর সি কী কষ্ট!
মাস শেষের আগেই পুরো মাসের
বুক পকেট শূন্য হওয়ার তীব্র যন্ত্রণা,
খরচের ভয়ে পরিবার নিয়ে কোথাও একটু বেড়াতে না যেতে পারার গোপন গ্লানি।
রাস্তায় মুখ লুকিয়ে টিসিবির ট্রাকের পিছনে হাজারো মানুষের ভিড়ে
একটু সস্তায় খাবার কেনার লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার অস্হির মনোকষ্ট,
আর এভাবেই চলছে আজকাল আমার মধ্যবিত্ত জীবনের দিনকাল।


এই জীবনের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে মধ্যবিত্ত মুখোশ খুলে ক্লান্ত কুকুরের মতো বিষাদের জিহ্বা বের হয়ে যায় একহাত,
তবুও অদৃশ্য দু’হাত দিয়ে বিত্তহীন নিজের মুখে ঝাপটে ধরে রাখি সুখি মধ্যবিত্ত মুখোশে।


এই মধ্যবিত্ত মুখোশের ওজন দিন দিন বাড়ছে,
আর মুখে ঝুলিয়ে রাখার শক্তি দিন দিন কমছে।
অপরিচিত  যন্ত্রণাদায়ক একবিষণ্নতায় ভুগছি-
কখন যে এই মেকি মধ্যবিত্ত মুখোশ খশে পড়ে যায় ফুটপাতে,
হাজারো মানুষের পায়ের তলা পিষ্ট হতে থাকবে  দিনরাত।
তাইতো বাড়ছে আমার মধ্যবিত্ত মুখোশের আগুনের তাপ।


আপনারা যারা উচ্চবিত্তগণ,
আমাকে ভুল বুঝবেন না।
পুরো শহর পুড়ে গেলে আপনাদের শরীরে কিছুটা হলেও আগুনের তাপ লাগবেই।


আর নিম্মবিত্তগণ,
আপনারাতো আগেই পুড়ে- আছেন!
পোড়া বুক আর কতো পুড়বে?


‘ঈশ্বর’
দয়া করুন,
আপনি আমাদের মধ্যবিত্তের বুকের গোপন কুয়ার জল আরেকটু বাড়িয়ে দিন।
সেখানে অন্তত যেন ঝলসে যাওয়া মধ্যবিত্ত মুখোশ
গোপনে শীতল করতে পারি দিনরাত
নিজের ইচ্ছামতো।


—————-
র শি দ  হা রু ন
২১/০২/২০২২