গত শতকে আমাদের অভাবের দিনে
বালক বেলায় এক শীতের সকালে বুক ভেঙে যাবার মতো কষ্ট দিয়ে
আমার হাফপ্যান্টের পকেট থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বাজারের বিশ টাকা!


মা তার মাটির রংয়ের শাড়ির আঁচল থেকে খুব যত্ন করে খুলে দিয়েছিল  বিশ টাকার নোটটা।
মাছের বাজারে মাছ কেনার পর পকেটে হাত দিতেই আমি বুকের জলে ভিজে গেলাম অকস্মাৎ-
অস্থির হয়ে টের পেলাম বুকের সেই জলে
পদ্মার মরা এক ইলিশ জীবন্ত হয়ে আমাকে উপহাস করছে আর সাঁতার কাটছে!
কয়েকটা  ক্ষুধার্ত শিংমাছ প্রচণ্ড রাগী কিছুটা অভিমানী, খানিকটা ভয়ার্ত আর পুরো অসহায়ভাবে বুকের জমিনে বার বার কাঁটা ফুটাচ্ছে।


আমি বিবশ হয়ে তাকিয়ে দেখলাম আশেপাশের সব মানুষ হাসি মুখে
ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে তাচ্ছিল্যের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
লোকজনের  সেই সব ব্যাগে বাজারের সাথে মিশে ছিল আমাদের অভাব, ক্ষুধা লুকানোর যন্ত্রণা,
আমার মায়ের মাটির রংয়ের শাড়ির আঁচলের মনোবেদনা আর আমার কেরানী বাবার সারাজীবনের জীবন যুদ্ধের অদৃশ্য গল্প।


এই অমোচনীয় দুঃখ আর দারিদ্রতার ভয় নিয়ে আমি আজও বাজারে যাই,
ব্যাগ ভর্তি করে যা খুশি কিনি।
‘মা’ “তবুও তোমার মাটির রংয়ের শাড়ির আঁচল থেকে খুলে দেওয়া সেই বিশ টাকার নোটের বাজার করা আমার আজো হয়নি!


এই দু’হাজার বাইশে এসে এখন আমার বাজারের ব্যাগে লেগে থাকে
‘বাবা’ “তোমার প্ররিশ্রমের গোপন রক্ত আর ঘামের গন্ধ আর মায়ের অমানুষিক ভালো থাকার আপ্রান যুদ্ধ”।


“মা’ “হারিয়ে যাওয়া তোমার সেই বিশ টাকা
আমি এখনো খুঁজে বেড়াই
একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য”।
—————————
র শি দ  হা রু ন
২২/১২/২০২২