আমি এখন আর পুরানো ঠিকানায় থাকিনা,
নতুন বাসায় উঠেছি একদিন হলো,
চারতলা ছাদের পূর্বকোণে একখানা টিনের ঘর ।


ছোট্ট ঘরটি ঝারপোছ করতে গিয়ে দেখলাম
একটা সোনার নাকফুল!
তামার হতে পারে,
ভাবলাম রেখে দেই।
আগের ভাড়াটিয়ার হবে হয়তো ,
যত্ন করে রেখে দিলাম কাগজে মুড়িয়ে শার্টের পকেটে।


যদি কোনো নারী হুট করে একদিন
দরজায় টোকা দিয়ে বলে,
“আপনি কি আমার নাকফুলটা পেয়েছেন?”
আমার নতুন ঠিকানায় নাকফুলটা
আমার নিঃসঙ্গ জীবনের বাসিন্দা হয়ে গেল।


দিনের বেলায় বেশিক্ষণ ঘরের বাইরে থাকিনা,
যদি নাকফুলটার খোঁজে কেউ এসে ফিরে যায়।


কোনো একজন নারী মন খারাপ করে ফিরে যাচ্ছে!
ভাবলেই আমার ভেতর অজানা এক তীব্র কষ্ট পাই।
মরানদী যেমন না দেখা
সমুদ্রের জন্য কষ্ট পায়
অথবা, কখনোই না পাওয়া
চিঠির জন্য সারাজীবনের অভিমান,
আমার কষ্টটা হয়তোবা সেই রকম।


আমি সারারাত জেগে থাকি নাকফুলটার দিকে তাকিয়ে।
যে নাকের শোভা বাড়িয়েছিল সেই নাকটার কথা ভাবি,
আস্তে আস্তে পুরো মুখটি ভেসে ওঠে
এক সময়ে হয়ে যায় আস্ত একজন নারী ।
তারপর বাবুইপাখির মতো
ঘর বানানো শুরু করি
সেই নারীর শরীরের সমস্ত জমিতে।


তবুও কষ্ট কমে না!
সুখ ভোলানো কষ্ট,
অভিমান বাড়ানো কষ্ট,
প্রিয় কবিতার নাম ভোলানো কষ্ট।


একসময় আমি পুরুষ হয়ে উঠি,
পৃথিবীর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত
নিঃসঙ্গ পুরুষের প্রতিনিধি হয়ে যাই।
শরীরে অস্হির কাম জেগে ওঠে বার বার।
গভীর রাতে বেরিয়ে পরি রাস্তায় সেই শরীরের খোঁজে।


হাতের মুঠোতে শক্ত করে ধরে রাখি নাকফুলটাকে।
টাকা দিয়ে প্রতিরাতে কতো মেয়ে মানুষের নাকে
নাকফুলটা পড়িয়ে দেখেছি,
কিন্তু ভেসে উঠা নারীর মুখটার সাথে মিলেনা কিছুতেই!
এই মুখ, সেই মুখ করতে করতে
প্রতিদিন ভোর হয়ে যায়।
তারপর অক্ষম পুরুষের কামনার মতো
নিজের শরীরের ভিতরই কামনাকে আবার মেরে ফেলি ।


নতুন ঠিকানায় আমি সবসময়
এখন ঘরের দরজা খুলে রাখি,
নাকফুলটার খোঁজে কোন নারী এসে
যেন ফিরে না যায়।
-----------------------
কাব্যগ্রন্থ- ভালো থেকো মনোলীনা
কবি-রশিদ হারুন
২০/০৩/২০১৭