আজকাল যখন তখন কেউ একজন আমাকে প্রায়ই ডেকে বলে
"হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?”


ঘরের দরজায় কোন ভিখারি যখন কড়া নাড়ে
তখন হয়তো আমি আরাম করে চা খেতে খেতে আসন্ন বাজেট নিয়ে ভাবি,
অথবা মাংসের তরকারিতে আরেকটু লবণ হলে খেতে ভালো হতো ভেবে মন খারাপ করি,
আমি আজকাল শুনতে পাইনা কোনো ভিখারির ডাক
ঠিক তখনই কে যেনো বুকের ভিতর তীব্র শব্দে চিৎকার করে ডেকে ওঠে,
‘হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?


রাস্তায় গণমানুষের মিছিল দেখলে
ভুল করেও স্লোগান দেই না  তাদের সাথে,
“আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে।”
আমি ভয় পাই কালো লাঠির আঘাতের,
বুকের কান্না ঝর়ানো টিয়ারশ্যালের
আর গোপন অসম্মানের মৃত্যু পরোয়ানার।
তখনই মিছিলের উল্টোদিকে দ্রুত হাঁটা শুরু করে পালাতে থাকি,
আমি পালাতে থাকি নিজের কাছ থেকে।
ভয়ের মাঝেও বুকের ঠিক মাঝখানটাতে আমি বারবার টের পাই এক বিকট চিৎকার
‘হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?


পত্রিকার সব খবর বিশ্বাস করি অনায়াসে কিংবা
নিজেকে জোর করে বিশ্বাস করাই
আমার দেশের সব খবর ফেরিওয়ালারা এক নম্বর ভেজালহীন খবর আমাদের সাপ্লাই দিচ্ছে দিন রাত।
আহারে খবর ফেরিওয়ালারা কি কষ্টই না করে আমাদের জন্য,
তখনই বুকের মধ্যে বিদ্রুপের হাসি দিয়ে কে যেনো বলে
‘হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?


কথা বলি না আজকাল দুঃস্বপ্নের ভয়ে।
‌অদৃশ্য সুই সুতো দিয়ে সেলা‌ই করে রেখেছি
নিজের দুই ঠোঁট,
‌অন্ধ সেঁজে চোখে টিনের চশমা পরে ঘুরি দিনরাত।
ভয় পাই যদি সত্য দেখে ফেলি
‌অন্ধ সেঁজে হাঁটতে গিয়ে একসময় ঠিকই ময়লার গর্তে পড়ে যাই।
তখনই ময়লার গন্ধের সাথে বাতাসে ভেসে আসে এক চাপা কন্ঠ
‘হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?


দেশের সকল মাননীয়দের সব কথাতেই আমি প্রতিবারই দু’হাত কচলাতে কচলাতে হাসি মুখে বলি,
জ্বি স্যার, জ্বি স্যার,
আপনার কথাই ঠিক।
তখনই কে যেনো পুরো শরীর ধরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে বলে
‘হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?


আজকাল আমি আয়নায় যতবার তাকাই
লজ্জায় কুকড়ে যাই ততবার।
আয়নার মানুষটার কাছ থেকেই দৌড়ে পালাই,
উর্ধ্বশ্বাসে শুধু দৌড়াই সারাজীবন
আমার নিজের জীবন থেকে,
আর পিছন থেকে আয়নার মানুষটাই দিনরাত্রি আমাকে ডেকে বলে,
‘হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?


"ও হারুন , ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?
-------------------------


র শি দ  হা রু ন
০৬/০৫/২০২১