মধ্যদুপুরে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে দাঁড়িয়ে বাসের ‌অধীর অপেক্ষায় যখন বিরক্ত,
ঠিক তখনই শুনলাম
নারী কন্ঠে কে যেন বাতাসে শিস বাজিয়ে ডেকে উঠলো,
কবি, এই কবি!


আমার মনে হলো আমি ছাড়া নারীর এই উতলা ডাক কেউই শুনেনি,
কারো মধ্যেই কোনো চাঞ্চল্য দেখা গেল না,
‌অথচ আমার বুকের ভিতরে একটা ‌অস্থিরতা শুরু হলো,
যেন নারীটি আমাকেই ডাকছে ;
‌ আমিতো কবি না,
কবিতার সাথে আমার কখনোই কোনো সম্পর্ক নেই,
আমি কবিতার ক-ও বুঝিনা-
কষ্ট করে এসব আবোল তাবোল লেখা পড়তে আমার বয়েই গেছে।
কবিদের দেখলেই আমার মনে হয়
ইচ্ছা করেই সবাই মন খারাপের মুখোশ পরে ঘুরছে ।


সেই আমারই কিনা
এক নাদেখা নারীর ‘কবি’ ডাকে মন উদাস হয়ে গেল!
ঝকঝকে রোদে পোড়া শাপলা চত্বরের পিচঢালা রাস্তা আচমকা ঝিরঝির বৃষ্টির জলে ভিজে গেল!
এক ঝাঁক সাদা বক তখনই শাপলার উপর এসে বসলো-
দেখে মনে হয় সাদা বরফে ঢেকে যাচ্ছে শাপলা ফুলটি!
মনে হলো মতিঝিলের সব রাস্তা ধীরে ধীরে জলে ভেসে যাচ্ছে !
একসময় পুরো মতিঝিল জলের নিচে
আর তার মাঝখানে এক সুন্দরতম শাপলা ফুল ফু্টে আছে সেই না দেখা নারীর জন্য।


‘নারী’ তুমি আরেকবার গলার সমস্ত শক্তি দিয়ে ডাক দাও,
‘কবি, এই কবি,’
কেউ সাড়া না দিলেও এবার আমি তোমার এই ‘কবি’ ডাকে সারা দেবো‌ই।


নারী তোমার কি কিছু লাগবে?
কোনো প্রেমের অথবা বিষাদের চিঠি?
অথবা একটি ডাকবাক্সের ঠিকানা?
লাল ‌অথবা হলুদ গোলাপ?
বাস নয়তোবা  ট্রেনের জরুরী কোন টিকিট?
প্রতিদিন তোমার জন্য লেখা নতুন কবিতা?


নারী মতিঝিলের এত জনকোলাহলের মাঝে বাতাসে শিস বাজিয়ে
তোমার এই ‘কবি’ ডাকে আমার বুকে অপরিচিত এক হাহাকার বাসা বেঁধেছে,
সাথে সাথে মন খারাপের কোনো মুখোশ ছাড়াই আমার মন খারাপ হয়ে গেল তোমার জন্য!
নারী তোমার কি প্রয়োজন আমাকে জানাও।


নারী তুমি যেই হও,
আমি তোমার জন্য এই আবোলতাবোল লেখা লিখেই আজ এই মুহূর্তে কবি হয়ে যাবো,
তোমার এক ‘কবি’ ডাক ঢাকা শহরের একজন চরম অকবিকে
কবি হওয়ার এক খ্যাপা আকাঙ্ক্ষায়
মাত্রই সারাজীবনের জন্য মতিঝিলের শাপলা চত্বরে আটকে দিলো।
————————-
র শি দ  হা রু ন
০৫/০১/২০২৩