একজন নতুন কবি তার প্রথম কবিতার বই ছাপার জন্য
কোনো প্রকাশক না পেয়ে ঠিক দুপুর বারোটায়
বাংলাবাজারের চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে
পাণ্ডুলিপির পাতা বাতাসে উড়াতে উড়াতে
চিৎকার করে বলছিলো,
“ কবিতার বেঁচে থাকার জন্য ছাপা কোনো কাগজের দরকার নেই
কবির বুকই যথেষ্ট। "


মাথায় বইয়ের বোঝা নিয়ে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে
এক কুলি তখন বলে উঠল,
“ কবিতার বই লিখে পেট চলবে না,
মাথায় বই নিয়ে দৌঁড়ানোর শক্তি লাগবে।”


এক  বয়সের ভারে নতজানু প্রুফরিডার  সিগারেট টানতে টানতে পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো,
“ আজকাল লেখায় এত এত বানান ভুল থাকে,
বাসায় ফিরতে আমার প্রতিদিনই দেরি হয়ে যায়।”


এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা পাণ্ডুলিপির ফেলে দেয়া কাগজের দিকে হাহাকার নিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বললো,
“ এভাবে কেউ পুরোনো কাগজ নষ্ট করে,
আপচয়কারী হলো শয়তানের বন্ধু!”


এক পরিচিত  ক্ষমতাবান কবি  এসি গাড়িতে জ্যামে বসে  বিরক্ত হয়ে  ড্রাইভারকে বললো,
“ কবিতা লেখা কী এত সহজ,
দেখ ছোকড়াটা  শুধু শুধু বাংলাবাজারের পবিত্র রাস্তাটা নোংরা করছে!”


এই পুরো দৃশ্যটা দেখতে আমার খরচ হয়েছিলো মোটে পাঁচ মিনিট।


বারোটা পাঁচ মিনিটে প্রচণ্ড তৃষ্ণায় বরফ ঠাণ্ডা এক গ্লাস লাচ্ছি খেয়ে বিল দিতে মানিব্যাগ বের করতেই,
মানিব্যাগের ভিতর থেকে খাপছাড়া কথা ভেসে এল বাংলাবাজারের বাতাসে,
‘আজকাল কেমন কাটছে তোমার?,
রাতের বেলায় ঘুমাও?,
না সারারাত একা একা ছাদে হাঁটাহাঁটি করো এখনো?'
‘বাসায় বাজার নেই,
বউ বাজার নিয়ে ঢুকতে বলেছে,
মনে রেখো- না হলে একটা বিশ্রী ঝগড়া লেগে যাবে।'


এই সব আজব কথা শুনতে শুনতে
আমি ঢাকা শহরে টিকে থাকার কথা ভাবছিলাম,
ভাবছিলাম ফন্দিফিকির করে এই শহরে বাঁচার কথা ।
আর মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছিলাম সেই নতুন কবিকে।


কবি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল বাংলাবাজারের রাস্তায় পড়ে থাকা তার কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি
মানুষের পায়ের পাতায় পিষ্ট হচ্ছে,
রিকশা আর গাড়ির চাকার তীব্র চাপে রক্তাক্ত হচ্ছে,
আর একজন ‌প্রকাশক খুঁজে না পাওয়ার অক্ষমতার হাহাকারে তার স্বপ্নের নির্মম মৃত্যু।


——————-
র শি দ  হা রু ন
০৪/১১/২০২২