দিন চলে যায়
আবার দিন আসে,
শূন্য ঘরগুলো সেই একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করে।


সারাদিন ফেরিওয়ালারা চিৎকার করতে করতে চলে যায় গলির পথটা ধরে।
ভিখারীরা দরজায় দাঁড়িয়ে সুরেলা গলায়
ডাকতে থাকে, “মাগো কিছু দেন,”
কেউ সাড়া দেয় না বাড়ির ভেতর থেকে।
একসময় বিরক্ত হয়ে অভিশাপ দিতে দিতে চলে যায় তারা,
আমি সব শুনেও চুপ করে বসে থাকি বিছানার উপর।


কারা যেন সারারাত মাইকে গান বাজিয়ে আনন্দ করে,
বাজি পোড়ায় যুদ্ধের বোমার মতো শব্দে,
আর ফানুস উড়িয়ে আকাশে আগুন জ্বালিয়ে দেয়;
আমি সারারাত ঘুমাই না,
বসে থাকি বিছানার উপর।


তুমি নেই তাইতো
কেউ আমার কষ্ট বুঝেনা এখন,
সেই কবে তুমি আমার বুকের মধ্যে ভালোবাসার প্রজাপতি উড়িয়েছিলে,
তারপর থেকে ভালোবাসা না পেলেই
বুকের প্রজাপতির ডানা ভেঙে যায়।
প্রজাপতির ডানা ভেঙে গেলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
দৌড়ে ঘরের সব দরজা জানালা খুলে দেই তখন,
খুঁজতে থাকি চারিদিকে
চিৎকার করে ডাকতে থাকি,
মাগো আমার বুকে কেন তুমি ভালোবাসার প্রজাপতি উড়িয়েছিলে?
তুমি ছাড়া এখন এই সব প্রজাপতি মরে যাচ্ছে,
এই ঘরগুলোও মরে যাচ্ছে তোমার অপেক্ষা করতে করতে।


মাগো,
আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না,
আমি দিনরাত ঘরের দরজা খুলেই রাখি
এখন আর আমার চোরের ভয় নেই,
মা তুমি চলে যাবার পর
আমার চুরি হওয়ার মতো আর কোন সম্পদ নেই এই বাড়িতে।


মা তোমার কথা মনে পড়লেই আমি কাঁদতে বসি,
বুকের মরা প্রজাপতিগুলো চোখের জলের সাথে বের হয়ে আসে।


মাগো,তুমি ছাড়া আমার নিজেকে এখন আর মানুষ মনে হয় না
প্রজাপতির মতো উড়ে যেতে ইচ্ছে করে তোমার কবরের কাছে,
আমার আর কাঁদতেও ভালো লাগেনা,
মানুষের হাঁটার শব্দ পেলেই দৌঁড়ে যাই ঘরে ঘরে।
তোমাকে খুঁজি
শুধু তোমাকেই খুঁজি,
বৃথাই এই অস্থিরতা আর এই ছুটে বেড়ানো পুরো বাড়িময়।


মাগো তুমি কবে ফিরে আসবে?
আমি অনেকদিন ঘুমাই না,
তুমি আসলেই আমি ঘুমাবো,
ভালোবাসার প্রজাপতি বুকে উড়িয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো, মা।
———————
রশিদ হারুন
১৬/০২/২০২২