মনোলীনা,
যেই আমি একসময় বিপ্লবী হতে চেয়েছিলাম তোমারই জন্য,
সেই আমি এখন তোমার শহরেই ইটের জঙ্গলে
নিজের কাছ থেকেই ফেরারী!


গভীর রাতে তোমার অভিমানের দুঃশাসনের প্রসাদ গুড়িয়ে দেবার গোপন প্রতিটি কর্মসূচীতে ব্যর্থ হয়ে
শহরের সব কাঁনাগলির দেওয়ালে দেওয়ালে ধাক্কা খেতে খেতে
আবারো নিজের ঘরে ফিরে আসি প্রায় শেষ রাতে।
ঘরে ফিরে আয়নায় চোখ পড়লেই টের পাই,
দেওয়াল নয়
আমার শরীরে ধাক্কা লেগেছে
এই শহরের গলিতে গলিতে আটকে থাকা আমারই মতো আত্মীয়হীন ব্যর্থ মানুষদের আশ্রয়হীন স্বপ্ন।
তখনই সেই সব আশ্রয়হীন স্বপ্নদের বাতাসে ভাসিয়ে দিতে দিতে
পাঁচতলার বারান্দার লোহার গ্রীলের খাঁচার ফাঁক দিয়ে শেষ রাতের
এক রহস্যময়ী আকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাই-
স্বাধীন মেঘের দাপাদাপি,
আলো ম্লান হতে থাকা মন খারাপ করা এক চাঁদ,
‌অকালে মরে নক্ষত্র হয়ে যাওয়া বিপ্লবী কিছু আপনজনহীন মানুষ
-জ্বলজ্বল করে জ্বলছে দূর ছায়াপথে!


আর কিছু কিছু আশ্রয়হীন স্বপ্ন বাতাসে উড়তে না পেরে পড়তে থাকে নিরীহ মাটিতে।
সেই মাটির দিকে তাকালেই দেখি
সেখানে শুয়ে আছে লম্বা এক অলস গলি,
সেই গলিতেই চোখে কষ্ট দেওয়া ল্যাম্পপোস্টের এক ভুল বাতি
-বারবার জ্বলে আর নিভে।
গলির শেষ মাথায় ডাস্টবিনের পাশে গোল হয়ে নিঃশব্দে বসে থাকে কিছু রাতের কুকুর,
তারা পাহারা দেয় ঘুমিয়ে থাকা এক নিঃসঙ্গ মাতালকে।


মনোলীনা,
তুমি ভেবে দেখো
কতো অমিল এই দুটো দৃশ্যে!
বিশ্বাস করো
আমার বড় অস্হির লাগে।
তখনই আমার এই অক্ষম বুক ছটফট করে;
চোখ জলে ভিজে যায় শুধু তোমারই বিচ্ছেদে।


মনেলীনা
আমি প্রতিবারই একরকম দৌড়েই ঘরের চলে আসি।
আবারো আয়নায় তাকাই,
জলে ভরা চোখে দেখি
ঘরের কোনে একাকী দাঁড়িয়ে
-একজন আপনজনহীন মনমরা পুরুষ।

মনোলীনা
এই শহরের ইটের জঙ্গলে পালিয়ে থাকতে থাকতে দিনকে দিন
তোমারই অভাবে  
আমি চরম বিপ্লবী না হয়ে
ধীরে ধীরে চরম বিষাদের কবি হয়ে যাচ্ছি।
—————————
র শি দ  হা রু ন
২৭/০২/২০২১