আমি যে কবে ‘বোবা’ হয়ে গেছিলাম
বুঝতেই পারি নাই,
কথা না বলতে বলতে
আমার ‘কন্ঠস্বর’ কখন অভিমান করে লুকিয়েছে ,টেরই পেলাম না,
এতোদিন চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে ছিলাম,
আসে পাশের হাহাকার আমাকে স্পর্শ করেনি।


কেউ কেউ আকাশ দেখার অপরাধে রিমান্ডে ছিলো,
আমার তাতে কিছুই যায় আসেনি,
আমি তখন দিব্যি মনে মনে
‘প্রেমের কবিতা’ লিখেছি চোখ বন্ধ করে করে।


কেউ কেউ সমুদ্রের জল ছোঁয়ার অপরাধে
জলে ডুবে মরার শাস্তি পেয়েছে,
আমার তাতেও কিছু যায় আসেনি,
আমি তখনও সুইমিং পুলকে সমূদ্র ভেবে
সাঁতার কেটে নিজেকে প্রচন্ড সুখী ভেবেছি।


কিছু কিছু মানুষ যখন সমতা’র গান গেয়ে
দীপান্তরী হয়ে নির্জনবাসের শাস্তি পেলো,সেই সময় আমি কফির পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে রবীন্দ্র সংগীতে
বারবার  ডুবছিলাম,
আর ভাবছিলাম
‘বেঁচে থাকার মধ্যেই আনন্দ’
তখনও আমার নিজের কিছুই  যায় আসেনি।


যেদিন ‘নির্মল মুক্ত বাতাস’ গ্রহনের অপরাধে,
অসংখ্য মানুষ ‘বিষাক্ত গ্যাস চ্যাম্বার’এ
দম বন্ধ হয়ে মরে গেলো,
সেই সময় আমি শীতল ঘরে বসে
পূর্ণিমার চাঁদের কথা ভাবছিলাম,
তখনও আমাকে কোনো
গ্লানি, অপরাধ, আর কষ্ট স্পর্শ করেনি।


কিন্তু যেদিন আমার নিজের
সমুদ্র, আকাশ দেখার শখ হলো,
সেদিন আর কোথায় খুঁজে পেলাম না তাদের,
আমি জানতাম না,
আকাশ আর সমুদ্র অপমানিত হয়ে
আত্মহত্যা করেছে অনেক আগেই।


সমতা’র গান  শুনতে ইচ্ছে হলো একদিন,
সেদিন একজন গায়ক ও আর বেঁচে নেই আর ।
‘নির্মল মুক্ত বাতাস’ এর জন্য যখন আমার
হৃদপিন্ড হাহাকার করছিলো,
ততোদিনে অভিধানে ‘নির্মল মুক্ত বাতাস’ শব্দটি নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।


তাই  আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম ,
অনভ্যাসে কোনো শব্দ বের হয়নি
আমার কন্ঠস্বর থেকে,
আমি বোবা হয়ে গেছি কবে, জানতেও পারিনি,
আর আমার চিৎকার শুনার মতো
একজনও যে আর এই শহরে বেঁচে নেই,
আমার আবেগ এতোদিনে একবারও
চোখ খুলে দেখেনি আশেপাশে।


‘কবিতা’ও আমাকে যেদিন মৃত্যূদন্ড দিলো
‘বোবা’ থাকার কঠিন অপরাধে,
সেইদিনই লিখে ফেললাম চরম বিপ্লবী কবিতা,
একটি বিশাল বড় শিরোনামহীন কবিতা,
একটি শব্দে-
“ প্রতিবাদ”।
যেদিন প্রথম ‘প্রতিবাদ’ শব্দটা লিখতে পেরেছি
সেইদিনই আমার কন্ঠস্বর ফিরতে শুরু করেছিলো।
————————————
রশিদ হারুন
১৭/০৮/২০১৮