সকালে এক কাপ চায়ে চুমুক দিতে দিতে পত্রিকার খবরে দেখলাম
প্রতিটি মানুষ পঞ্চাশের পর থেকেই
ধীরে ধীরে ভুলতে থাকে সব কিছু!
তারপরই মনে হলো আমিতো কালই পঞ্চাশ পার করলাম।


সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমিও ভুলতে শুরু করেছি গতকাল থেকেই,
গতকালের সারাদিনের কথা ভাবলাম,
পরিচিত একজনের সাথে দেখা হয়েছিল
অথচ তখন নামটাই মনে করতে পারিনি,
কিছুতেই যখন মনে করতে পারছিলাম না,
তখন বোকার মতো নিজেকেই শুনিয়ে বলে ফেলেছিলাম
“ একটু আগেও মনে ছিলো, মাত্রই ভুলে গেলাম।”


বাজার থেকে ডিম আনতে গিয়ে কাল ডাল নিয়ে ফিরেছি
ভাড়ার গাড়ি ভেবে নিজের ড্রাইভারকে ভুল করে  টাকা দিতে গিয়েছিলাম,
বেচারা লজ্জায় পড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ।


বাম হাতের বদলে ভুল করে কাল ডান হাতে ঘড়ি পরে বের হয়ে সরাদিন পার করেছি,
মোবাইলের বদলে পকেটে টিভির রিমোর্ট নিয়ে ঘুরেছি পুরোদিন।


‘আপনি’ বলতে গিয়ে ‘তুমি’ বলে ফেলেছি কাল কয়েকজনকে
আর ‘তুমি’ বলতে গিয়ে ‘আপনি’,
ব্যাংকের চেক লিখতে গিয়ে অনেকদিন পর তারিখ ভুল লিখেছিলাম।


নিজের একাকী বাসায় ফিরতে গিয়ে কাল
ভুল করে
আমাদের পুরাতন মহল্লায় তোমার বাড়ির দরজা পর্যন্ত চলে গিয়েছিলাম।


কি কুক্ষণে যে আজ পত্রিকার পাতায় এই খবরটা পড়েছিলাম,
তারপর থেকেই আমার মনে এই পঞ্চাশ বয়সটা বাসা বেঁধেছে।


পঞ্চাশ পার হলো
কতো কিছু ভুলে গেলাম একদিনেই-
কত কাজ এখনো বাকি,
সব মনে করতে পারছিনা,
শুধু ভুলতে পারছিনা-
সেই ভোর বেলা ‘না দেখা এক বাড়ি’ থেকে কোরআনের মধুর সুর যখন ভেসে আসছিল
পূর্বদিকের সূর্য তখনও মেঘের আলসেমি থেকে ঠিকমতো বের হতে পারেনি,
আর ঠিক তখনই এক নতুন ঝকঝকে রিকশায় তুমি চলে যাচ্ছ আমাকে ফেলে;
পরিত্যক্ত করে সারাজীবনের জন্য।


সেদিন আমি খুব আশ্চর্য হয়ে টের পেয়েছিলাম
কোরআনের সেই সুরে আকাশে বাতাসে চারিদিকে ছিল আমারই জন্য শোক আর সান্ত্বনা।


আমার ভুলে যাবার শুরুর বয়সে
তুমি চলে যাবার মতো ভুল যেন
আর কখনো আমার দরজায় আর কড়া নাড়তে না পারে
দয়া করে আরেকবার ফিরে এসো আমার পঞ্চাশে
যদি তোমার সময় হয়।


————
র শি দ হা রু ন
০৯/০১/২০২৩