আমার কেরানী বাবা আমার জন্মের পর,
সংসারে আমাদের কিছুটা ভালো রাখার জন্য,
অফিস ছুটির পরও
-দুটো টিউশনি শেষে রাত করে বাড়ি ফিরতেন।
এমনকি উনার অফিস ছুটির দিনগুলোতেও,
নিউমার্কেটের দুটো শাড়ির দোকানের হিসাবের খাতা মিলিয়ে দিতেন সারাদিন ধরে।


শৈশবে আমি আমার বাবাকে খুব কমই দেখেছি বাড়িতে।
উনি কখন বের হতেন আর কখন ঘরে ফিরতেন,
বলতেও পারতাম না ঠিকমতো।


বাবা মারা যাবার পর,
মার কাছ থেকে আমাদের এই সত্য ইতিহাস শোনার পর,
আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে।
আমি এখন অফিস পাড়ায় ঘুরে ঘুরে স্বল্প বেতনের কেরানীদের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করি।
তাদের গল্পগুলোতে শুধু ‘নাই আর নাই’ এর লজ্জিত হাহাকারের ধুলো।
সেই হাহাকারের ধুলো বুকে মেখেই বাড়ি ফিরি,
আর তাদের জীবনের মাঝে আমার বাবার জীবন খুঁজি।


বাবার এই পরিশ্রমের ইতিহাস জানার পর এখন মনে হয়,  
আমার বাবা ছিলেন একজন প্রাচীন ‘সংসারের শ্রমদাস’।


ছুটির দিন আসলেই মনে হয়,
আমার মৃত বাবা বোধ হয় সংসারে আমাদের কিছুটা ভালো রাখার জন্য,
এখনো সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছেন।


আমি যথেষ্ট ‘আরাম প্রিয় মানুষ’ হওয়ার পরও,
এখন প্রতিটি ছুটির দিনেই বাবার কবরে চলে যাই।
সারাদিন কবরের পাশে বসে থাকি,
রাত করে বাড়ি ফিরি,
যদি বাবার কোন পরিশ্রমে হাত লাগাতে পারি।


মার কাছ থেকে এই ইতিহাস শোনা ঠিক হয়নি আমার,
আমি নিশ্চিত,
এই জীবনে আমি আর কখনোই একটিও ছুটির দিনের দেখা পাবোনা।
————————
রশিদ হারুন
০৭/০৮/২০২০