মনোলীনা,
কাউকে বলতেও পারছিনা
আমি আজকাল কী এক ছন্নছাড়া বিপদে পড়েছি !
তোমার কথা ভাবতে গেলেই
সুনীলের কথা মনে পড়ে যায়!
যখন তোমার মুখ আর চিবুক আমাকে চুম্বকের মতো টানে
তখনই সুনীলের সেই হাতের কথা ভাবি,
যে হাত সাহস করে একদিন নীরা’র মুখ, চিবুক ছুঁয়েছে,
তোমাকে ‘ভালোবাসি’ বলার জন্য যখন অঘুমে পার করি রাতের পর রাত,
তখনই বারবার সুনীলের সেই সাহসী ওষ্ঠের কথা মনে পড়ে যায়,
যা নীরা’কে বলেছিলো ‘ভালোবাসি’।


আজকাল খুব ভোরবেলায় তীব্র ঝড়বৃষ্টি হবে ভেবে কালো রঙের ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি,
নিজেকে সুনীল ভাবতে ভাবতে সাহস করে    তোমার বাড়ির পাশে কখন যে চলে আসি,
টেরও পাইনা,
চারদিকে কোথায়ও ঝড় বৃষ্টির নামগন্ধও নেই।
প্রতিবার তখনই মনে পড়ে,
এ যে জানুয়ারী মাস!


মনোলীনা,
হয়তো তখনও তুমি ঘুমিয়ে লেপের ওমের নীচে।
থোক থোক কুয়াশায় তোমার বাড়ির নাম ফলকটাও অস্পষ্ট,
আশ্চর্য আমি দিনের যখনই তোমার বাড়ির দিকে রওনা দেই
শুধু সে সময়ই আমার বুকে তীব্র ঝড় বৃষ্টি শুরু হয় অনবরত।


মনোলীনা,
কাউকে বললে বিশ্বাসই করবেনা,
পাগল বলে হাসতেও পারে,
তোমার বাড়ির কাছে আসলেই
কামিনী ফুলের একটা গাছ সাদা ফুলে ভরে থাকে সবসময়-
তাতে অসংখ্য চড়ুই পাখি বসে করুণার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সেসব চড়ুই পাখির চোখ থেকে চোখ লুকাতে তোমার বাড়ির বারান্দায় দিকে তাকালেই দেখি,
সেই বারান্দায় হঠাৎ ভেসে ওঠে টলমলে   জলে ভরা এক পুকুর।
বলা নেই কওয়া নেই
সেই পুকুরের জলেই ভিজে যায় আমার শরীর।
অথচ আমি জানি তোমার এই ছোট্ট ইট পাথরের মহল্লায় কোনো বাড়িতেই কামিনী ফুলগাছ নেই,
নেই কোনো জলের পুকুর।


তবুও তোমার মহল্লায় আসলেই
আমি  মাথার উপড় একটা ছাতা ধরে রাখি প্রতিবার-
ভিজে যাবার এক ‌অচেনা ভয়ে।


মনোলীনা,
আজকাল তোমার দেখা পাইনা সারাদিন
সূর্যও ডুবে যায় একসময়
তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে।
শীতকালটা বোধহয় লেপের ওমের ভিতরেই কাটবে তোমার?
তাইতো একবারের জন্যও বারান্দায় এসে দাঁড়াও না;
জানালা খুলে উকি দিতেও হয়তো তোমার প্রচন্ড আলসেমি !


সারাদিন পর  আমার আর সাহস থাকেনা সুনীলের মতো,
সাহস কমে গেলেই আমার হাতে ধরা ছাতাও ঝড়ো বাতাসে উড়ে যায় আকাশে।
আমি দৌড়ে কোনোমতে বাড়ি ফিরি।


বাড়ি ফিরেই সোজা ছ’ফুট লম্বা আয়নায় তাকাই,
নিজেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলি-
মনোলীনা,
এই শীতকালটা গেলেই
যেদিন তুমি খুব সকালবেলা বৃষ্টি দেখতে তোমার বাড়ির নিচে এসে দাঁড়াবে,
সেদিন আমার এই হাত আর ওষ্ঠাধর সুনীলের মতো সাহসী হবে তোমার জন্য,
শুধু তোমার জন্য।
————
র শি দ  হা রু ন
১১/০১/২০২৩