এই শহরে
আমার যৌবনে কখনো সবুজ রঙের বসন্ত দেখিনি,
একটিও টলটলে জলে ভরা পুকুর ছিলোনা আমার,
আমি একটা নিজস্ব আস্ত সাদা মেঘলা আকাশের মালিক হতে পারিনি এই  শহরে,
আমার ব্যক্তিগত পোষ মানানো একটিও কাক, চড়ুই আর কুকুর ছিলোনা,
মিছিলে সঙ্গ দেওয়ার একজন বন্ধুও পাইনি,
এই শহরে আমার কোনো খবর ছিলোনা কখনোই।


তোমারই খবরের আশায়
পথে বিপথে যৌবনকাল ছুঁড়ে দিয়েছিলাম,
তোমার ইশারার ‌অপেক্ষায়
রাজপথের সব ট্রাফিক সিগন্যালের লালবাতির নীচে একযুগ ঠায় দাঁড়িয়েছিলাম এই শহরে।


এই শহরের সব চায়ের দোকানে তখন
প্রতিটি চুমুকেই ছিলো তোমার‌ তপ্ত বিরহ,
প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায় ছিলো তোমার জন্য ভেজা বিষাদ;
সব রাস্তার মোড়ে মোড়ে ছিলো তোমার বিশাল ছায়া।
এই শহর ছিলো তখন সম্পূর্ন তোমারই শাসনাধীন।


আধাযুগ ধরে এই শহরের ছেড়ে তাই
আমি আত্মগোপনে ছিলাম-
তোমার উদ্ধত বিলাশী অহং এ আমারই বুকের সহ্যহীন বেদনা বোধে,
কখনো মরা নদীর চরে আটকানো কোন ফেরির গোপন কুটিরে;
অথবা দিনের সূর্যাস্তের শেষ নিস্তেজ আলোতে,
পিপাসায় কাতর কোন পুরুষ বৃক্ষের হলুদ পাতায়,
কাঁটাবনের দোকানে খাঁচায় সাজানো
প্রতিটি ঘুঘুর স্বপ্নহীন যৌবনে।


পড়তি বেলায় অন্ততঃ একবার বেঁচে থাকার আশায়
তাইতো আধাযুগ পর তোমার‌ই শহরে
ফিরে এসে দেখি
তোমারই শাসনে
তোমারই ইশারায়
আমার একজীবনের সেই একই চৈত্রকাল চলছে এখনো পুরো শহর জুড়ে
আর একই লাল ট্রাফিক বাতি বিরতিহীন জ্বলে সারাক্ষণ শহরের পথে পথে।


তাইতো গভীর রাতে আবারো তোমার শহর ছেড়ে
এক ভালোবাসাহীন একরোখা বিপ্লবীর মতো আত্মগোপনে যেতে যেতে
রাজপথের সব দেয়ালে দেয়ালে লিখে দিলাম
“ আমাদের একজীবন যেনো না যায় ভালোবাসাহীন,
তোমার এই উদ্ধত অহং এর পতন হোক,
ভালোবাসা দীর্ঘজীবী হোক”।
———————————-
র শি দ  হা রু ন
০৫/০২/২০২১