দস্তা হিসেবে কাগজ কেনার প্রয়োজন এখন ফুরিয়ে গেছে
দোয়াত থেকে কলমে কালি ভরে
লেখার সময় এখন অতীতে চলে গেছে।
টিউব ওয়েলের ঠাণ্ডা লোহা মেশানো পানির স্বাদে
তৃষ্ণা মেটানো এখন আর হয় না
বিদ্যুৎ চলে গেলে এখন আর
তাল পাতার হাত-পাখা ঘুরানোর প্রয়োজন হয় না
কিংবা হ্যারিকেনে কেরোসিন পুড়ে
সোনালী রঙের আলো কোথাও জ্বলে ওঠে না
ডাকপিয়ন এখন আর
চিঠি নিয়ে আসে না।


এখন সময় পাল্টে গেছে।
এখন বাতাসে সীসা পানিতে ক্লোরিন
খাবারে মিশে আছে ফরমালিন।
চারিদিকে শুধু ইট, সিমেন্টের কংক্রিট
মানুষের মেজাজ আজ খিটমিট
নিয়ন বাতির ভিড়ে
চাঁদের আলো এখন আর
প্রবেশ করে না এই শহরে।
ফেইসবুক, টুইটার, আই-ফোন, গ্যালাক্সি-ট্যাব ছেড়ে
কে দেখবে আজ তোমার কবিতার বই নেড়ে-চেড়ে?


হয়তো সময় পাল্টে যাবে আরও
মানুষ আজ তড়িৎ-নির্ভর হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত
হয়তো তুমি ভালবাসবে কোনও এক
সোনালী চুলের মেয়েকে
কিংবা নীল চোখের রমণীকে
কিন্তু সাবধান!
হতে পারে সে এক তড়িৎ-মানবী
হয়তো মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখবে
সে বুকের পাঁজর খুলে ডিভাইসে কানেক্ট করছে।


তৈরি হয়ে গেছে অটো-রিচার্জেবল ব্যাটারি চালিত কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড
তৈরি হচ্ছে দেহের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর ধাতব মেরুদণ্ড
সাঁ সাঁ শব্দে সেন্সর চিপস আর সার্কিট চলছে
জড় মানুষ জীবন্তের মতো করছে।


এরপর কোনও এক অজানা গুহার ভেতরে
গোপনে গোপনে তড়িৎ মানুষ বানাবে তড়িৎ মানুষকে
বানাবে অতি-আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ভেতরে ভেতরে
হঠাৎ বেরিয়ে আসবে কোটি কোটি
সশস্ত্র তড়িৎ মানুষের দল
শুরু করবে যুদ্ধ জীবন্ত মানুষের সাথে
জীব-জড়ের যুদ্ধ, তাণ্ডব, হট্টগোল।


তারপর?


তারপর কেউ হয়ত তোমাকে জিজ্ঞেস করবে না
তুমি কি মেঘলা দিনের গোলাপ দেখেছ
কিংবা বৃষ্টি ভেজা রজনীগন্ধা?
আর কেউ হয়ত পেছন থেকে ডেকে
কাছে এসে হাত ধরে তোমাকে বলবে না
চলো না কিছু দিন ঘুরে আসি
আকাশ যেখানে মিশে গেছে সাগরে।


হয়ত তুমি বলতে পার এটা নিছক কল্পনা
কিন্তু তবুও সাবধান!
অতিমাত্রায় তড়িৎ নির্ভর হয়ে যেও না।