আমার নাম পারুল গিরি
আমার নাম পারুল গিরি
পরপর তিনটি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য
যাকে কেরোসিন তেল ঢেলে প্রকাশ্য রাস্তায় আগুন
ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল,
হাসপাতালের নোংরা মেঝেতে শুয়ে অর্ধদগ্ধ শরীরের যন্ত্রণা
ভুলে মেয়ে জন্ম দেওয়ার অভিশাপ মেনে নিয়ে
পুলিশের কাছে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ
না জানিয়ে সংসারে ফিরে আসার জন্য স্বামীর পা জড়িয়ে
কাকুতি মিনতি করেছিলাম-
আমি সেই পারুল গিরি।
পোড়া শরীরটাকে সযত্নে কাপড়ে ঢেকে
স্বামী- সংসারের মঙ্গলের জন্য শাঁখা-সিঁদুর পরি,
সারাদিন উপোস করে ঠাকুরের কাছে মানত শোধ করি,
আবার রাতের বেলা পোড়া শরীরটায় স্বামীর কামনার ভোগ্য
হতে পারি না বলে লাথি খাই -
আমি সেই তোমাদের সোনার গাঁয়ের মেয়ে শ্রীমতী পারুল গিরি!
আমি আমার মেয়েদের নাম দুর্গা, কালী,লক্ষ্মী, রাখিনি
কারণ, একদিন তোমরাইতো পথে ঘাটে মাঠে বাসে ট্রেনে
দেবীর মুখোশগুলি নির্মমভাবে খুলে দিয়ে পরম তৃপ্তিতে
ধর্ষণ করবে- হয়ত তখন দুর্গাষ্টমীর সন্ধ্যারতি,
ঢাকের আওয়াজে চাপা পড়ে যাবে আমার মেয়ের আর্তনাদ!
কিংবা কালীপুজোর প্রদীপের তলার গুমোট অন্ধকারে কোন
ঝুপড়িতে ফেলে দিয়ে যাবে আমার মেয়ের লাশ কিংবা
লক্ষ্মীপুজোর রাতে তোমার বাগানবাড়ির মেহফিলে উলঙ্গ
নাচতে বাধ্য করবে আমার কোন মেয়েকে অলক্ষ্মীর তকমা দিয়ে।
আমি আমার মেয়ের নাম রেখেছি কান্না ,
আমি আমার মেয়ের নাম রেখেছি ধর্ষিতা,
আমি আমার মেয়ের নাম রেখেছি লাঞ্ছিতা,
নামগুলো তোমরা শুনে ভিরমি খাবে,
হয়ত ভণ্ড বেদনায় সহানুভূতির অভিনয়ে
জানতে চাইবে-
তাদের ধর্ম?
তাদের বর্ণ?
তাদের বাসস্থান?
হ্যাঁ, তারা উত্তর দেবে-
তাদের ধর্ম নারী,
তাদের বর্ণ নারী,
তাদের বাসস্থান তোমাদের এই পুণ্যভূমি সীতা-সাবিত্রীর দেশ
ভারতবর্ষ।
জানি তোমাদের মুখ লজ্জায় রাঙা হবে না,
বরং যুগযুগান্তরের আধিপত্যবাদের পৌরুষ উল্লসিত হবে
নির্মম ব্যাখ্যায়।
আমি পারুল গিরি
আমার আধার কার্ডও আছে
আমার ভোটার কার্ডও আছে
তবু পরিচয়হীন বেঁচে থাকি তোমাদের সমাজে
দুবেলা দুমুঠো খেতে পাওয়ার জন্য
রুগ্ন-শীর্ণ মেয়েগুলির মাতৃত্বের বোঝা কাঁধে নিয়ে।