জামাল কথা দিয়েছিল, ও ফিরে আসবে
শহর থেকে মেহেন্দি নিয়ে আসবে
জামাল মিথ্যা  বলেনা!
ওদের সংসার টা অনেক বড়
তার থেকে ওর মন
ওর পড়াশুনা খুব লাগতো , শুধু ভালো লাগতো
ওর ভালো লাগা কোনোদিন ভালোবাসায় পরিণত হয়নি
জামাল সংসারের হাল ধরতে লাঙলের হাল ধরে
জামালের কবিতা ভালো লাগতো
কবিতাকে  ভালবাসতে পারেনি
জামাল খেতে ভালোবাসতো
খাদ্যকে ভালো বাসতে পারেনি
আমার সাথে শেষ দেখা হয়েছিল
রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহে
বছর পনেরো আগে।
খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো, অপেক্ষা করিস ,
হাফ প্যান্ট, ফতুয়া পরা কিশোর
হাসি মুখের ভিতর লুকানো কষ্ট
স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল চিক চিক করা চোখ
বলেছিল, এ বছর   ঈদ শহরে হবে
আমি শহরে চলে যাচ্ছি
আমি কাজ করবো ,
অনেক টাকা উপার্জন করবো
বাবা কে শীতের চাদর
মাকে একটা তাঁতের শাড়ি
তোর জন্যে মেহেন্দি
আমি সব নিয়ে আসবো
ছোট্ট ভাই কে পড়াবো
দিদি দুজনের বিয়ে দেব
তার পর বাবাকে তোর বাড়ী পাঠাবো
তুই অপেক্ষা করিস কিন্তু!
জামাল  মিথ্যা বলেনা
যা কিছু বলেছিল , তা প্রায় করেছিল
শহুরে জামালের অর্থে বাড়ীর সব কাজ প্রায় সম্পন্ন
এমত অবস্থায় হটাৎ জামাল খোঁজের বাইরে
এক দশক কোনো পাত্তা নাই
জামাল গ্রামে আসেনি আর আমার মেহেন্দি
প্রতীক্ষার অবসান আর হলনা
আমি এখন অন্যের গৃহিণী
এক সন্তান, দুই কন্যা তবু ও আশায় বুক বেঁধে
জামাল আসবে নিশ্চই আসবে
জামাল মিথ্যা বলেনা


বহু বছর পর , কোনো এক ঈদের দিনে
বাড়ির উঠোনে
ফাটা কাপড় , উস্কো খুস্কো চুল
কয়েক বছরের না কমানো দাড়ি
হ্যা , অনেকটাই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে
হাতে একটা মেহেন্দি
আমার একরত্তি চিনতে দেরি হয়নি
আমি দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
জামাল তুমি কথা রাখলে না?
চুলে ঢাকা চোখ তুলে
গোঁফে ঢাকা ঠোঁট খুলে
সুধু এ টুকুই বলেছিল
আমি কথা রেখেছি
আমার বাবা  আর তুমি রাখনি,
জামাল মিথ্যা কথা বলে না