রাতের খাটে বসে বউ, চোখে তার যেন জ্বলন্ত ঢেউ,
বলে, “শুনো কবি মশাই, আর কতো নারী রূপের ঢেউ?
কতই না লিখো কোমর-কাব্য, আঁখি নিয়ে ছন্দ-ছোঁয়া,
আমারে নিয়া কিছুই না, আমি কি তবে ঘরের ছোঁয়া?”
আমি বলি, ওগো রাজ্ঞী, তোমারেই ভাবি প্রতিক্ষণ,
তোমার ছায়ায় আঁকি আমি অন্য নারীর বর্ণন!
তুমি ছাড়া গঠে না রাধা, প্রেমের সুরে বাজে না বাঁশি,
তুমি চাও—তোমারে নিয়া আলাদা এক কবিতা চাষী?
সে বলে, “না গো বাবু, এই চালাকি আর চলবে না,
শুধু আমি, অন্য কেউ না, গল্পে-ছন্দে আসবে না!
তোমার চোখে কিছুই নাই, দেখার মতো রূপ গুণে?
লিখতে পারো পরীর কাহিনি, আমায় কেনো ছেঁটে বুকে?”
আমি তখন ভাবি চুপে—আহা, কী দিয়ে লিখি গীত,
নাক তার মোটা, ঘুমে হাঁসে, গালে পরে মুখের চিত!
চুলে তার তেল, গন্ধে জব্দ, হাঁটায় নাই কোনো ধ্বনি,
তবুও দেখি, রেগে গেলে বাজায় সে তান্ডব রাগিণী!
তবু বলে—“এক বুদ্ধি দেই, ভাবো আমি বউ নই গো আজ,
এক অপরিচিতা, প্রেম জমেছে, হৃদয়ে বাজে রসের সাঁজ!”
চোখ বন্ধ করি, মনে ভাবি, এক অপূর্বা রূপসী প্রিয়া—
আর কি আশ্চর্য! মুখ খুলে বেরিয়ে আসে এই কবিতার ধারা—
তোমার হাসি শিউলি পাঁপড়ি, চোখে কুয়াশা, ঠোঁটে ফুল,
চলার ছন্দে ঢেউ উঠে, মন হারায়, হৃদয় ভুল!
তোমার তিলে ঝিকিমিকি চাঁদ, কণ্ঠে সুরের জলধি বাজে,
তোমার নামে কলম হাসে, ছন্দেরা সব প্রেমে সাজে!”
বউ হেসে বলে, “এই তো হলো! কাব্য তুমি মন থেকেই আনো,
তবে শোনো, আজ থেকে আমি বউ না, প্রেমিকা রূপে জানো!”
এই কবিরে পাঠক চেনো, সংসারে যে গদ্য লিখে,
প্রেমে ছন্দ, ঝগড়ায় গীত, আর স্ত্রীর কথায় পদ্য ঠিকে!